খেলাধুলা
তিন বলে তিনটি উইকেটে তাসকিনের হ্যাটট্রিক রেকর্ড
টানা তিন বলে আসেলা গুনারতেœ, সুরঙ্গ লাকমাল ও নুয়ান প্রদীপকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন। ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল বাকি থাকতে অলআউটও হয় শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৮.৫ ওভার বল করে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। শেষে গিয়ে বোলিং তা-ব দেখান। গতির ঝড় তোলেন। তাতে করে শ্রীলঙ্কা যে আরও কয়েকটি রান স্কোরবোর্ডে যোগ করার জন্য এগিয়ে চলছিল, ৩১১ রানেই থেমে যায়। বাংলাদেশের সামনে জিততে টার্গেট দাঁড় হয় ৩১২ রান।
এর আগে ৪০ বার হ্যাটট্রিক হয়েছে। তাসকিন হ্যাটট্রিক যখন করলেন, তখন ৪১তম বার হ্যাটট্রিক করা হয়ে গেল। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন। সবার আগে পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব করেন হ্যাটট্রিক। ২০০৬ সালের ২ আগস্ট জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন শাহাদাত হোসেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি করেন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর পরপর তিন বলে উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান পেসার রুবেল হোসেন। তাসকিনের আগে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাসকিন হ্যাটট্রিক করেন।
তাসকিন বিশ্বের ৪১তম ওয়ানডে হ্যাটট্রিকটি করেন। বিশ্বের ৪০তম ওয়ানডে হ্যাটট্রিকটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ছিল। সেটি করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জেমস ফকনার। গত বছর করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে সর্বপ্রথম হ্যাটট্রিক করেন পাকিস্তানের জালাল-উদ-দিন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ডটি গড়েন তিনি। এছাড়া সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে আরেক পাকিস্তানী আকিব জাভেদ হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ১৯৯১ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৯ বছর ৮১ দিনে কীর্তিটি গড়েন আকিব। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিনবার হ্যাটট্রিক করার নজির গড়েছেন শ্রীলঙ্কার ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। এছাড়া ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা চার বলে চারটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাসকিন আহমেদ মঙ্গলবার টানা তিন বলে তিন উইকেট নেয়ার নজির গড়লেন। দিনের শুরুটা খারাপ গেলেও শেষ বেলায় নায়ক হয়ে উঠলেন যেন তাসকিনই। হ্যাটট্রিক করার মতো কঠিন কাজটি যে করেছেন। তাতেই ইতিহাসের পাতাতেও ঢুকে গেছেন।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গতিময় বোলার হচ্ছেন তাসকিন। তার গতির সামনে এবার শ্রীলঙ্কা শেষ মুহূর্তে ধসে পড়ল। আগেই জানিয়েছিলেন, এমন কিছু করতে চান; যা দলের জন্য উপকার হয়। জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিযোগিতা থাকবেই। প্রতিযোগিতা যত বেশি থাকবে, বাংলাদেশের পেস বিভাগ তত শক্তিশালী হবে। কে খেলবে, কে খেলবে না, সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের সেরাটা দিতে। সুযোগ পেলে আমরা আমাদের সেরাটা ঢেলে দিব।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি খুব ভাগ্যবান। ইনজুরি জিনিসটা এমন, সিঁড়িতে হাঁটার সময়ও পা মচকে যেতে পারে। হ্যাঁ, আমি অনেক হার্ডওয়ার্ক করছি। তবে মূল ব্যাপার আল্লাহর রহমত। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে সুস্থ আছি। এটাই মূল ব্যাপার। এখন আমি ইনজুরি নিয়ে কমই চিন্তা করি। মানসিকভাবে শক্ত থাকাটা জরুরী। এই ক্ষেত্রে মাশরাফি ভাই আমার পথ প্রদর্শক। তিনি বলছেন, এটা নিয়ে বেশি ভাবতে না করছেন। আমার সবকিছুতে মাশরাফি ভাইই আমার মেন্টর। আমার লাইফ স্টাইল, সবকিছুতে। আমি সেরাটাই দিতে চাই।’ তাসকিন সেই সেরাটা দিলেনও। হ্যাটট্রিক করলেন।