ঠাকুরগাঁও
বালিয়াডাঙ্গীতে দেয়ালে পোষ্টার লাগিয়ে শিক্ষা অফিসারের অপসারণ দাবি
রবিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদ চত্ত¡র ও স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরার দেয়ালে পোষ্টার লাগিয়ে সচেতন প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের ব্যানারে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অপসারণ দাবি জানানোর পোস্টার লক্ষ্য করা যায়।
জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করার পর হতে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে চলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য এবং নারী কেলেংকারিসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।
ঘুষ ছাড়া তার অফিসে ফাইল নড়েনা। কারণে-অকারণে শিক্ষকদের বিল-ভাতা স্থগিত রাখেন মাসের পর মাস। পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়ে আবার চালু হয়ে যায় শিক্ষকদের বিল-ভাতা। সম্প্রতি শিক্ষক বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। কুট-কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশাসনিক বদলির ব্যবস্থা করে সে স্থলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক বদলির ব্যবস্থা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক প্রাথমিক শিক্ষক জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদান করার পর হতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন শিক্ষকদের কলা-কৌশলে বিভিন্ন রকম হয়রানি করে চলেছেন। উৎকোচ ছাড়া তার অফিসে দীর্ঘদিন ঘুরাফেরা করেও কোন কাজ হয় না। টেবিলে ফাইল পরে থাকে মাসের পর মাস। তাছাড়াও বিদ্যালয় পরিদর্শনের নামেও শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে বেকায়দায় ফেলে পরবর্তীতে রক্ষার নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন।
অনেক শিক্ষিকা অভিযোগ করে প্রতিবেদককে জানান, সুবিধা প্রদান ও রক্ষার নামে শিক্ষিকাদের মোবাইল ফোনে সন্ধ্যার পরে অফিসারের আবাসিক কোয়ার্টারে ডাকেন। কোয়ার্টারে আসতে সম্মত না হলে বিভিন্ন প্রকার হয়রানী, বদলি ও বিভাগীয় মামলার হুমকিও প্রদান করেছেন ওই অফিসার।
সম্প্রতি উপজেলার ছোট সিঙ্গিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা পারভীন আকতার তার এহেন আচরণের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর নিকট সরাসরি অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোপূর্বে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন রানিশংকৈল উপজেলায় কর্মরত থাকাকালিন নিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রহিমা বেগমের শ্লীলতাহানীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে নওগাঁ জেলায় বদলির আদেশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলের তদবীরের মাধ্যমে তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শিক্ষা অফিসে বদলি হয়ে আসেন। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় বদলি হয়ে আসার পর হতে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে অর্থ আদায় করছেন। ফলে শিক্ষকরা তার ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। উপায়ান্তর না পেয়ে সচেতন প্রাথমিক শিক্ষক সমাজে’র ব্যানারে প্রাথমিক শিক্ষকগন উপজেলা পরিষদ চত্ত¡র ও স্থানীয় চৌরাস্তা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার লাগিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেনের অপসারণের দাবি জানান।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেনের বিভিন্ন ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কথা সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি ২৮ মার্চ “অফিস সময়ে শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় তালাবন্ধ” শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকা ও গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে উল্লেখ আছে ওই অফিসার দিনের বেলা অফিস না করে সন্ধ্যার পরে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
অপসারণের দাবীর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঃ মান্নান বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।
এছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসে আজ দুপুর ১২টায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন আজ অফিসে আসেন নি। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অফিসের অন্যান্য স্টাফ জানান, আমাদের অফিসারের কথামত চলতে হয়, তার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তার কর্মকান্ডে আমরা অতিষ্ঠ।