দেশজুড়ে
অাজ সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস
দিনটি পালনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১ সৈয়দপুর জেলা কমিটির দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলেও সৈয়দপুরে ধ্বংসজজ্ঞ শুরু হয়েছিল দুই দিন আগে ২৩ মার্চ। এদিন এখানে শুরু হয় প্রত্যক্ষ লড়াই। গভীর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা সৈয়দপুর শহরের নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ।
ওই দিন অনেকে সর্বস্ব ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান সৈয়দপুর শহর থেকে। আশ্রয় নেন শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। অনেকে আবার আটকা পড়েন শহরে। আটকে পড়া বাঙালিদের ফেলে সেদিন তৎকালীণ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমএলএ) ডা. জিকরুল হকসহ অনেকে সৈয়দপুর শহর ছাড়তে রাজি হননি।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের একটি কনভয় দল ডা. জিকরুল হকসহ প্রায় ১৫০ জনকে আটক করে নিয়ে যায় সৈয়দপুর সেনানিবাসে। এরপর সেখানে ১১এপ্রিল পর্যন্ত তাদের ওপর দীর্ঘ ১৯ দিন চালানো হয় নির্মম শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতন। ১২ এপ্রিল স্বাধীনতাকামী এসব মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয় সৈয়দপুর থেকে ৪০ কি.মি দূরে রংপুর সেনানিবাসের দক্ষিণে উপশহর নিশবেতগঞ্জ এলাকায় ঘাঘট নদীর বালুচরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়।
এদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীণ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সামসুল হক, ডা. বদিউজ্জামান, আমিনুল হক, কুদরত-ই-এলাহী, আশরাফ আলী, ডা. আব্দুল আজিজ, সমাজকর্মী তুলশীরাম আগরওয়ালা, রামেশ্বর আগরওয়ালা, রেলওয়ে কর্মকর্তা আয়েজ উদ্দিনসহ নাম না জানা অনেকে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের নয় মাসে সৈয়দপুর শহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে কতজন শহীদ হয়েছিলেন তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন সূত্রমতে এদের সংখ্যা সহস্রাধিক। শহরে এমনও অনেক পরিবার ছিলো যাদের কোন সদস্যকে সেদিন বাঁচতে দেওয়া হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে এসব শহীদদের স্মরণে এখনও সৈয়দপুর শহরে কোন স্মৃতিসৌধ কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে উঠেনি। সরকারিভাবে এসব শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে নেওয়া হয়নি কোন কার্যকর উদ্যোগ। ১৯৯৭ সালে প্রজন্ম ৭১’র সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার নিজ উদ্যোগে শহরের জিআরপি মোড়ে ‘স্মৃতি অম্লান’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং ২০১৩ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার উদ্যোগে কারখানার অভ্যন্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্মরণে নির্মিত হয় ‘অদম্য স্বাধীনতা’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ। ৭১-এর ১২ এপ্রিল শহীদ সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হককে তৎকালীণ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০২ সালে স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন।
আবারো বছর ঘুরে ১২ এপ্রিল এসেছে। দিবসটি পালনে প্রজন্ম ৭১ এর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, মসজিদ-মন্দির-গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে স্মরণসভা।