Connect with us

দেশজুড়ে

নবাবগঞ্জে বিষমুক্ত সুস্বাদু আম লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে বেকার যুবকেরা

Published

on

এম রুহুল আমিন প্রধান,নবাবগঞ্জ: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে বিষমুক্ত উন্নত মানের সুস্বাদু আম লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে বেকার যুবকেরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে উন্নত প্রজাতির ও সুস্বাদু আম লিচুর বাগান করে বেকার যুবকেরা উন্নয়নের চাকা ফিরিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৮নং মাহমুদপুর ইউনিয়নে আ¤্রপালি, হিষ্যাপাতি, ল্যাংড়া ভোগ, হাড়িভাঙ্গা আম আর চায়না-৩, বোম্বে লিচু এখন বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে। উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকা চাষীরা জানান, প্রযুক্তিভিত্তিক ট্রেনিং আর কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে আম লিচুর বাগান সৃজিত হয়েছে। একই বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ধানসহ কাঁচা তরিতরকারি আবাদ হচ্ছে। কৃষকেরা জানায়, এ বছর ২০ কোটি টাকার আম লিচু স্থানীয় জেলা শহরে চাহিদা মিটিয়ে খোদ রাজধানীতে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এদিকে রংপুর বিভাগের বাম্পার আম লিচু ফলনের উর্বর এলাকার নাম মাহমুদপুর ইউনিয়ন। গ্রাম-গঞ্জের বাড়িতে ও খুলিয়ান সহ বিস্তর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে আম লিচু। আম লিচু বাগান মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানগুলোতে আম লিচু প্রচুর পরিমাণ থোকায় থোকায় ধরে আছে। তিনি জানান, আম বাজারে আসতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. তহিবুর রহমান জানান, তিনিও লেখাপড়ার পাশাপাশি উন্নতজাতের আম লিচুর বাগান করেছেন। তিনি জানান, দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিকের সার্বিক পরামর্শে ৫০টি বাগানে উন্নতমানের আম লিচু চাষ করেছেন। বিষমুক্ত উৎপাদিত চায়না-৩ ও বেদেনা লিচু বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, চায়না-৩ লিচু ৩৫০ টাকা থেকে ৪শ টাকায় দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক ও বাগান মালিক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোকলেছুর রহমান জানান, দেশের তৃতীয় ফল সমবায় সমিতি লিমিটেড মাহমুদপুর ইউনিয়নে রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত আম লিচু বিদেশে রপ্তানি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন চাষীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যেই চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকার আম গবেষকদেরকে নিয়ে এসে মাহমুদপুর ইউনিয়নে কৃষকের উৎপাদিত ফল বিদেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা চলছে। নবাবগঞ্জ উপজেলার ৮নং মাহমুদপুর ইউনিয়নের উৎপাদিত উন্নত প্রজাতির বিষমুক্ত ফল ইউরোপ দেশে রপ্তানি করতে দিনব্যাপী ১শ আম চাষীকে নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা হলাইজানা ফাজিল মাদ্রাসা হলরুমে সমিতির সভাপতি মো. জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে চাষীদের উৎপাদিত উন্নত মানের ওই আম রপ্তানি করার লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনে আম চাষী ও ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে নিরাপদ আম উৎপাদনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। মাহমুদপুর ফলচাষী সমিতি ও উপজেলা প্রশাসন এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সহায়তা করছে চাপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ত¡ গবেষণাকেন্দ্র। ফলে এ বছরেই ইউরোপে রপ্তানি হতে যাচ্ছে মাহমুদপুরের আম। কর্মসূচির মধ্যে আছে চাষীদের আমের উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা দেয়া, প্রাকৃতিকভাবে আম চাষের প্রশিক্ষণ, কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া, কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহারে প্রচারণা এবং আমের মুকুল থেকে শুরু করে আম সংগ্রহ পর্যন্ত বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ। এছাড়া ফ্রুট ব্যাগিং করা হবে প্রায় ৫ লাখ আমের। এ বছরে রপ্তানী হবে তিন জাতের আম- হিমসাগর ল্যাংড়া আ¤্রপালি। মাহমুদপুরের আম রপ্তানীর বিষয়ে বেশ আনন্দিত কৃষকরা। এটা হবে এই এলাকার কৃষি উন্নয়নে এক নতুন দিগন্ত। আম প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি জানতো না মাহমুদপুরের মানুষ। এই এলাকার আম চাষের উন্নয়নে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বজলুর রশীদ এর তত্ত¡াবধানে গঠিত হয়েছে মাহমুদপুর ফলচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড। এটি দেশের তৃতীয় আমচাষী সমিতি। মাহমুদপুরে চাষ হচ্ছে হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, আ¤্রপালি, বারি-৪, রুপালীসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির আম। মৌসুমের শুরুতেই গাছ পরিষ্কার করে উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত¡াবধানে শুরু হয় আমের প্রাথমিক পরিচর্যার কাজ। নির্দেশনা মতে গাছের যতœ নিচ্ছেন চাষীরা। আমের পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়েও পোকা দমন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদেরকে দক্ষ করে তুলতে চলছে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ বছর নবাবগঞ্জে মাহমুদপুর ফলচাষী সমবায় সমিতির ১শ জন চাষীসহ প্রায় এক হাজার আম চাষীর ৮০২ কেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মাহমুদপুর ইউনিয়নের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে আম উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জড়িত। আম-ই এই এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল। আম চাষের মধ্য দিয়েই বদলে গেছে মানুষের ভাগ্যের চাকা। শুন্য থেকে শুরু করে কোটিপতি হবার গল্পও আছে মাহমুদপুরে। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে এই এলাকার আম খুব সুস্বাদু। স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট খুলনা নোয়াখালীসহ সারাদেশেই যাচ্ছে মাহমুদপুরের আম। এবারে আম চাষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় আমের রঙ ও গুণগত মান বাড়বে। আমে কেমিক্যালের ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে মাহমুদপুর সমবায় সমিতি ও উপজেলা প্রশাসন। কৃষকরাও মাহমুদপুর সমবায় সমিতির আয়োজনে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়ে, খ্যাতনামা আম গবেষকদের সাথে কথা বলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনেছেন। ফলে কোনো ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক ও নিরাপদ আম উৎপাদনে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন এই এলাকার চাষীরা। শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদনে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বজলুর রশীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রেজা, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা মো. আসাদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান ও মলি­কা সেহানবীশ, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম রুহুল আমিন প্রধান, সাংবাদিক হাসান মিজবাহ, এস এম আলমগীর প্রমুখ। শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ এলাকার গুণিজনদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ। ওই সমিতির সদস্য ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের সফল ফলচাষী মো. মোকলেছার রহমান জানান, তাদের উৎপাদিত আম, লিচু, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। বিডিপত্র/আমিরুল

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *