Connect with us

জাতীয়

অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের তাড়ানোর চেষ্টায় আসামে উত্তেজনা

Published

on

ভারতের আসাম থেকে কথিত ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের’ বের করে দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা নাগরিকদের এক বিতর্কিত তালিকা আজ রবিবার প্রকাশ করছে রাজ্য সরকার। এই তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে পুলিশ ও প্যারামিলিটারি ফোর্সের প্রায় ৬০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে আসামের মুসলিম নেতারা বলছেন, নাগরিকদের এই বিতর্কিত তালিকাটি প্রকাশ করা হচ্ছে রাজ্যের মুসলিমদের রোহিঙ্গাদের মতো রাষ্ট্রবিহিন নাগরিকে পরিণত করার জন্য। খবর:বিবিসি ও রয়টার্সের।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি গত বছর রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর ‘রাজ্যের অবৈধ মুসলিম বাসিন্দাদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের দাবি ছিল, অবৈধ মুসলিমদের কারণে স্থানীয় হিন্দুরা কাজের সুযোগ হারাচ্ছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১৯৫১ সালের পর আসামে প্রথমবারের মতো পরিচালিত এক জনগণনার ভিত্তিতে এই ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স’ তৈরি করা হয়েছে।

ভারতের আসাম রাজ্যের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম। রবিবার যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, তা থেকে মুসলিমদের উল্লেখযোগ্য অংশকে বাদ দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরির আশংকা রয়েছে। তবে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা, রয়টার্সকে বলেন, এই তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ চিহ্নিত করা। হিমান্ত শর্মা এই তালিকা তৈরির দায়িত্বে আছেন। তিনি আরো বলেন, নতুন তালিকায় যাদের নাম থাকবে না, তাদের বহিস্কার করা হবে। আমরা এক্ষেত্রে কোন ফাঁক রাখতে চাই না এবং এজন্য সব ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশি হিন্দুদেরকে তারা আশ্রয় দেবেন। কারণ বাংলাদেশে তারা নিপীড়নের শিকার হন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাম রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।

এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন রয়টার্সকে বলেছেন, এভাবে অবৈধ বাংলাদেশিদের বহিস্কার করার ব্যাপারে ভারত সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে কোনো ধারণা নেই। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য পায়নি।

অন্যদিকে বিজেপি নেতাদের দাবি, ভারতের আসাম রাজ্যে প্রায় ২০ লাখ মুসলিম রয়েছেন যাদের পূর্বপুরুষরা বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকেই যে তারা আসামে থাকতেন, সেরকম দলিল-প্রমাণ হাজির করতে পারলে তাদের ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। আসামের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি এলাকার বাসিন্দা আসিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা-দাদারা সবাই ভারতে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু আমরা যে ভারতের নাগরিক, সেটি প্রমাণের দলিলপত্র আমরা যোগাড় করতে পারছি না। কারণ আমার পূর্বপুরুষরা ছিলেন নিরক্ষর। তারা কোন দলিলপত্র রাখেননি।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি যখন ভারতের ক্ষমতায় আসে, তখন ওই নির্বাচনের সময় আসাম রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়। ওই সহিংসতায় ৪০ জনের বেশি নিহত হয়। নির্বাচনী প্রচারণার সময় নরেন্দ্র মোদী হুমকি দিয়েছিলেন যে, তিনি জিতলে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ ব্যাগ গোছাতে হবে, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ করেছেন। আইনে এমন সংশোধনী আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের আগে যে হিন্দুরা, কিংবা মুসলিম ব্যতীত অন্য সংখ্যালঘুরা ভারতে এসেছেন, তাদের অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য করা হবে না।

আসামের একজন জ্যেষ্ঠ মুসলিম নেতা গত মাসে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে যদি নাগরিকদের তালিকা করা হয়, সেটি দেশের জন্য ‘ভয়ংকর’ হবে এবং অস্থিরতা তৈরি করবে। আসামের মুসলিম অধ্যুষিত বরপেটা জেলার একটি কলেজের শিক্ষার্থী রফিকুল আলী বলেন, তালিকায় নিবন্ধনের জন্য যেসব কাগজপত্র পত্র চাওয়া হয়েছে তা আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা দিতে পারবে না। এই তালিকা শুধু সংকটই বাড়াবে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি আসাম বিজেপি নেতার

আসাম থেকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের’ বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য বিজেপি সরকার। এবার তারা ত্রিপুরার ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীকেও বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। আসামের মন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিজেপি নেতাদের ওপর হামলা বন্ধে তিনি ব্যর্থ হলে আগামী বিধানসভার নির্বাচনের পর তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার মানিক সরকারের নিজের আসনে এক জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে আসামের নেতা এই কথা বলেন। এএনআই’র এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *