Connect with us

দেশজুড়ে

তিনশো টাকায় রংপুরের পিপির লাশ পুঁতে রাখে দুই কিশোর

Published

on

বিডিপত্র ডেস্ক: রংপুরের বিশেষ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে হত্যার পর আলমারিতে লাশ ভরে নিয়ে তাজহাট মোল্লাপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে পুঁতে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে ঘুমের বড়ি খাইয়ে অচেতন করে তাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ২৬ মার্চ মাত্র তিনশো টাকার বিনিময়ের দুই কিশোর বালু খুঁড়ে গর্ত করে রাখে এবং শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকাল এগারোটার দিকে লাশ মাটি চাঁপা দেওয়ার পর ঐ দুই কিশোর তা সমান করে রাখেন। র‍্যাব ও পুলিশের তদন্তে এসব বিষয় উঠে এসেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা ও স্ত্রীর প্রেমিক কামরুল মাস্টার, সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‍্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (৩১ মার্চ) আইনজীবী রথীশের নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন সংগঠন তার খোঁজ দাবিতে আন্দোলনে নামে। পরে র‍্যাব- ১৩ (রংপুর) এর সাথে ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম আইনজীবি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। এরপর পহেলা মার্চ তার ভাই সুশান্ত ভৌমিক কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। র‍্যাবের গোয়েন্দা টিম তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক দিপাক্র হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে তিনি পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে তার কথিত প্রেমিক কামরুল মাস্টারসহ সে তার স্বামীকে হত্যা করেছে জানিয়ে লাশের অবস্থানের কথা জানায়।
র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক তদন্ত ও তার স্ত্রীদের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে, দুই মাস আগেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রাতে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের সহকর্মী ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলামের নির্দেশে মাত্র তিনশো টাকার বিনিময়ে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান তাজহাট মোল্লাপাড়ায় নির্মাণাধীন ভবনের খোলা রুমের বালু খুড়ে রাখে। কামরুল মাস্টার তাদের শিক্ষক হওয়ায় তারা এ আদেশ পালন করে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক বাবু সোনাকে ভাত ও দুধের সাথে ১০ টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানোর পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে শয়ন কক্ষে কামরুল মাস্টার প্রবেশ করেন। পরে স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ও প্রেমিক কামরুল মিলে বাবু সোনার গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শয়নকক্ষের আলমিরাতে লাশ রেখে দেয়। পরের দিন শুক্রবার (শুক্রবার) ভোর ৫ টায় শয়ন কক্ষ থেকে বের হয়ে যায় কামরুল। সকাল ৯ টায় কামরুল মাস্টার লাশ গুম করার জন্য একটি ভ্যান নিয়ে আসে এবং আলমারি ঠিক করার কথা বলে ভ্যানে করে আলমারিতে থাকা লাশ নিয়ে আগে থেকে মাটি খুড়ে রাখা সেই বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে বেলা ১১ টার দিকে লাশ বস্তাতে ভরে পুতে রাখে। এ সময় সবুজ ও রোকনুজ্জামান তাদের শিক্ষকের কথামতো মাটি চাঁপা দেওয়া জায়গা সমান করে রাখে।
পরে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাত ২ টার দিকে স্ত্রীর দেখিয়ে দেয়া অবস্থান মতে মঙ্গলবার রাতে মোল্লাপাড়ায় কামরুল মাস্টারের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির খোলা রুমের মাটির নিচ থেকে বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করে র‍্যাব। এ বিষয়ে বুধবার (৪ মার্চ) রংপুর র‍্যাব সদর দপ্তরর এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, আমরা তার স্ত্রী এবং দুই ছাত্রকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। কি ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তা মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে পরে জানা যাবে। আমরা আশাকরি এ ঘটনার সাথে জড়িতের আইনের আওতায় নিয়ে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক হোসিও কোনি এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের পিপি ছিলেন। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি, সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোট, সুজন, দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী ছিলেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *