Connect with us

জাতীয়

প্রতিবাদের ভাষা যখন মানবদেহে অগ্নিসংযোগ

Published

on

মো. মনিরুজ্জামান639119584acccb4a4eaa824b3978b6b9

প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে মানবদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ইতিহাসে বহুবার ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সাড়া জাগানো আরব বসন্তের সূচনা হয়েছিল মূলত তিউনিসিয়ার এক বেকার যুবকের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে। মোহাম্মদ বুয়াজিজির নামের ওই যুবকটি এক পুলিশের দুর্ব্যবহারের কারণে জনসম্মুখে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার এই প্রতিবাদের ভাষা এতই কার্যকরী ছিল যে, তার আত্মাহুতির জের ধরে তিউনিসিয়ায় ব্যাপক সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় এবং মাত্র ২৬ দিনের মধ্যে বেন আলী সরকারের পতন ঘটে। শুধু তিউনিসিয়ায় নয়, যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়েছে মুক্তিকামী মানুষ। কখনও সে ক্ষোভ অন্যরা অনুভব করতে পেরেছে, কখনও পারে নি। যাই হোক আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের প্রতিবাদের সমর্থক না হলেও এখানে প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছি ইতিহাসের আলোকে পাঠকের সামনে বর্তমান সময়ের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে। বর্তমান মানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট।
পাঠক, বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নাম করে যা চলছে, আন্দোলনের নাম করে যে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, সহিংস কর্মকাণ্ড চলছে, ট্রাক-বাসের নিরীহ-নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকে আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হচ্ছে এটাকে নিশ্চয়ই আপনি আর যা-ই হোক আন্দোলন বলবেন না। আন্দোলন হয় জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা। কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আন্দোলন হতে পারে না। চোরাগোপ্তা হামলা করে, সহজ-সরল মানুষের রক্তপাত ঘটিয়ে প্রকৃতপক্ষে কার লাভ হচ্ছে? লাভ তো কারও হচ্ছেই না, মাঝখান থেকে পৃথিবীর বুকে এই দেশটি একটি জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। পশ্চিমা মোড়লরা আমাদের ব্যাপারে অযাচিত নাক গলানোর সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলাফল আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টি দেই তাহলে দেখতে পাবো যে, মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিছুক্ষেত্রে নিজেই নিজের গায়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, ছটফট করতে করতে প্রাণত্যাগ করে কার্যত যালেম শ্রেণির গালে চপেটাঘাত করেছে কিন্তু অন্যায়ভাবে নিরাপরাধ কাউকে জিম্মি করে বা অন্যের গায়ে আগুন দিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে নি। সারা পৃথিবীর মধ্যে একটি দেশও পাওয়া যাবে না যেখানে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক দাবি আদায় করতে গিয়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে নিরাপরাধ মানুষের শরীরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে অঙ্গার করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, এ বর্বরতম দৃষ্টান্ত তথা কলঙ্ক রচিত হয়েছে একমাত্র আমাদের দেশেই। হতভাগা এই জাতিটিকে আরও কত দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে কে জানে।
যারা এ ঘৃণিত অপকর্ম করছে স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা তাদের উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য স্বার্থ প্রতিষ্ঠা, আখের গোছানো, মানুষের জীবন-সম্পদকে ব্যবহার করে নিজেদের অভিসন্ধি পূরণ করা। মানুষের জন্য যারা রাজনীতি করবে, মানুষের জন্য যাদের জীবন নিবেদিত তারা কীভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে কয়লা বানাতে পারে? সাধারণ মানুষ বলে কি এদের প্রাণের দাম নেই? এই নিপীড়িত, অত্যাচারিত, অবহেলিত মানুষগুলোকে আর কত কষ্ট সহ্য করতে হবে? আর কত প্রাণ হারালে, আর কত মায়ের কোল খালি হলে, আর কত সন্তান এতিম হলে রাজনীতিকদের রক্তপিপাসা মিটবে?
লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ, রাজশাহী বিভাগ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *