Connect with us

জাতীয়

পাঠক প্রতিক্রিয়া: আপনার সন্তানকে নিয়ে একটু ভাবুন

Avatar photo

Published

on

শ্রদ্ধেয় মুরুব্বীগণ, আমার সশ্রদ্ধ সালাম জানবেন। আমি আপনাদের পুত্র ও পৌত্রসম একজন তরুণ হিতাকাক্সক্ষী। বহুদিনের অব্যক্ত কিছু বাস্তব অনুভূতি ও সঞ্চিত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে বসেছি নিছক দায়বদ্ধতাবশত। অবশ্য এই দায়বদ্ধতা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নয়, আমার বিবেক-বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব ও আমার ধর্মের প্রতি। সে দায়মোচনের লক্ষ্যেই এ খোলাচিঠির আশ্রয়।
বহুবার শুনেছি, জেনেছি- শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, শিক্ষা ছাড়াও তেমন বিশ্বদরবারে কোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না, বারবার তাকে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়। শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিসম। একটি মানবশিশু মায়ের গর্ভ থেকেই চর্মচক্ষু লাভ করে, কিন্তু জগতে ওই চর্মচক্ষুই যথেষ্ট নয়। দৃষ্টির সাথে সাথে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে, ন্যায়-অন্যায়, করণীয়-বরণীয়, বৈধ-অবৈধ জ্ঞান প্রদান করে। চিন্তাশক্তি, বোধশক্তির দুয়ার উন্মোচন করে। সুবিস্তীর্ণ নীলাকাশ দেখে কেউ ভূত-প্রেতের নিবাস কল্পনা করে, আবার কেউ গ্রহ-নক্ষত্র-তারকারাজী দেখে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ভ্রমণের নকশা আঁকে, মহাবিশ্বের বিশালতা দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে স্রষ্টার মাহাত্ম কীর্তন করে। দৃষ্টিভঙ্গির এই ব্যবধান শুধুই শিক্ষাপ্রসূত। এখন দেখার বিষয় হলো আমরা যে শিক্ষা লাভ করছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে শিক্ষাব্যবস্থা রেখে যাচ্ছি তা কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে।
আজ আমাদের বাস্তবতা হলো, কোনো তরুণ-তরুণী অসম্ভব প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে নামকরা একটি দেশীয় বা ভিনদেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেলে তার পরিবার-পরিজনের আনন্দের অন্ত থাকে না। এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবেশিদের কাছে, যাচিত বা অযাচিত উভয়প্রকারেই। কার ছেলে কোন ভার্সিটিতে পড়ে, কার মেয়ে কোন নামকরা বিদ্যাপীঠে স্থান পেল অভিভাবকরা সেটাকেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করতে ভালোবাসেন। কিন্তু এ আত্মতৃপ্তির সঞ্জিবনী রস যে কবে শুকিয়ে গেছে সে খবর কি তারা রাখেন? বিনীত অনুরোধ- আগেই আনন্দে আটখানা হবেন না। আপনার আনন্দের সময় এখনও আসে নি। প্রতিষ্ঠানের নাম-যশ আপনার কোনো কাজে আসবে না যদি না প্রিয় সন্তানের সুশিক্ষা লাভ হয়। যখন দেখবেন আপনার ছেলে বা মেয়ে সুশিক্ষা লাভ করে মানুষের মতো মানুষ হতে পেরেছে, এই জগৎ-সংসারকে কিছু দিতে পারছে, কেবল তখনই আপনার আনন্দের সময় আসবে। তখন আপনি গর্ব করে বলতে পারবেন- আমার সন্তান শিক্ষিত এবং অবশ্যই সুশিক্ষিত; আমার সন্তান দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে মানবতার কল্যাণে কাজ করছে। আমি গর্বিত, আমি আমার সন্তানকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু যদি দেখেন আপনার প্রাণপ্রিয় সন্তান দেশের জন্য নয়, মানুষের জন্য নয়, এমনকি পরিবার-পরিজনের জন্যও নয়- নিছক নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, নিজের এতটুকু সুবিধা অর্জনের জন্য দেশ-জাতির স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে, কিংবা কোনো দেশবিরোধী অসাধু স্বার্থান্বেষী মহলের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তখন আর গর্ব নয়, আপনার পুত্রের সেই শিক্ষা আপনাকে লজ্জায় ডোবাবে। তাই বলছি, আগেই খুশিতে আটখানা হবেন না, সন্তানের দিকে দেখুন, শুধু বাবা হিসেবে নয় একজন দেশপ্রেমিকের দৃষ্টিতে বিচার করুন।
আমিও একজন বাবার সন্তান, আমার বাবাও আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, সন্তানের সাফল্যে বাবা-মায়ের নিঃস্বার্থ আনন্দ পুরোটা অনুভব না করলেও, কিছুটা বুঝি। আপনিও আপনার সন্তানকে নিয়ে সীমাহীন আশাবাদী, সন্দেহ নেই। সেই আশার আলো যাতে অশুভ শক্তির দমকা হাওয়ায় মুহূর্তেই নিভে না যায় সে কারণেই বলছি- ভার্সিটি-কলেজে পড়–য়া সন্তানটিকে আরও একবার দেখুন। চর্মচক্ষুর পাশাপাশি অন্তরের চোখ দিয়ে দেখুন। ছেলে লেখাপড়া করছে, লেখাপড়া শেষে একদিন চাকরি-বাকরি করবে বা ব্যবসা করবে, কাড়ি কাড়ি টাকা রোজগার করবে, অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্য তৈরি করবে- যদি এই হয় আপনার বাসনা তাহলে আমার কিছুই বলার নাই। আপনি অপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আপনার আশা পূরণ হবে, কারণ যুগের হাওয়া ওদিকেই বইছে। তবে আপনার মনস্কামনা যদি হয় এমন, একদিন আপনার সন্তান এই দেশ, সভ্যতা, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে উন্নত করবে, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াবে তাহলে সেই আশা মিছে।
আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, যে সন্তান কিছুদিন পূর্বেও আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করত আজ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসার পর সে আপনার সাথে কেমন আচরণ করছে? লক্ষ করেছেন কখনও- যে ধর্মের জন্য জীবন বাজি রাখতেও আপনি কুণ্ঠিত নন, যে সংস্কার কাল থেকে কালান্তরে আপনার পরিবার ও সমাজকে সমৃদ্ধি ও সোহাগের বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে সেই ধর্ম, সেই সংস্কার-সংস্কৃতির ব্যাপারে আপনার সন্তানের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন? যে দেশের মাটির জন্য দলবেঁধে মা-মাটি-মানুষের গান গেয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলেন, সহযোদ্ধাদের হাসিমুখে দাফন করে এলেন, সেই দেশের মাটি ও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আপনার সন্তানের হৃদয়ে প্রভাব ফেলতে পারছে কি? স্মরণ করুণ আপনার স্কুল-কলেজ-পাঠশালার শিক্ষকদের কথা যারা এখনও আপনার হৃদয়ের মণিকোঠায় সম্মানের সাথে পূজিত হন। আর বিবেচনা করুন আজ শিক্ষকদের প্রতি আপনার সন্তানের শ্রদ্ধা-সম্মানের পূর্ণতা বা ঘাটতির কথা। আপনার সন্তান কি তার শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে সাফল্যের সাথে জীবন নদী পার হবার প্রেরণা কামনা করছে নাকি উচ্ছৃঙ্খলতা আর ঔদ্ধত্বপূর্ণতার পরিচয় দিয়ে শিক্ষককে গৃহাভ্যন্তরে অবরুদ্ধ করে রাখছে? জুতাপেটা করছে? এসিড নিক্ষেপ করছে?
নিজেকে প্রশ্ন করুন, বিবেকের কাঠগড়ায় বিচার করে দেখুন আপনার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সন্তানটির গতিপথ কোন দিকে? আর চোখ-কান বন্ধ করে থাকবেন না। চারপাশটা একবার ভালোভাবে দেখে নিন। ভবিষ্যত কল্পনা করুন। দেখবেন গা শিউরে উঠবে। ভয়ঙ্কর এক অতল গহ্বরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আপনার সন্তানকে, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। আমি শিক্ষার বিরুদ্ধে নই। শুরুতেই বলেছি, শিক্ষা ছাড়া যে কোনো জাতি অন্ধ। জ্ঞানের আলো যতক্ষণ না ছড়াবে ততক্ষণ সে অন্ধকার ঘুঁচবে না, সমাজ ও দেশ আলোকিত হবে না। কিন্তু এটাও তো সত্য যে, শিক্ষার নাম করে অশিক্ষা-কুশিক্ষা চালু থাকলে সেটা সমাজের অন্ধকারকে আরও ঘনীভূত করবে।
এ কেমন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চলছি আমরা? শিক্ষাব্যবস্থায় যে রাহু প্রবেশ করেছে তার গ্রাস আমাদের ভবিষ্যতকে দিনদিন পঙ্গু করে ফেলছে, অথচ আমরা নিশ্চুপ! শুধু কি নিশ্চুপ, বরং এই ভয়ানক শিক্ষাব্যবস্থার করাল থাবায় ছেলে-মেয়েকে বন্দী করে রেখে আনন্দে আটখানা হচ্ছি, তাদের সুনিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তা করে পুলকিত হচ্ছি। ভাবছি- এই বুঝি জ্ঞানের সূর্য উদিত হয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকা অন্ধকারগুলো দূর করে দিবে, পৃথিবী সেই আলোর ঝলকে বিমোহিত হয়ে রবে। কত উদাসীন আমরা, কত অদুরদর্শী আমরা, সেই সাথে কত নির্বোধ আমরা!
আরো লক্ষ্য করুন, একদা সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা আজ ক্লাসে আপনার ছেলেকে কী শেখাচ্ছে, কী পড়াচ্ছে। আপনার সরল ছেলেটির কানে কত জঘন্য বিষ ঢেলে দিচ্ছে, কীভাবে এক শ্রেণির শিক্ষক বিদেশি এজেন্ডা বাস্তাবায়ন করছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি একদিনের জন্যও আপনি আপনার সন্তানকে একথা বলেন নি যে, বাবা তোমার ক্লাসে কী পড়ানো হয়, কী কথা শোনানো হয় একটু বল তো। জিজ্ঞাসা করেন নি, কারণ হয়তো ভেবেছেন- আমি ওসবের কী বুঝব? খুব বুঝবেন। যদি সন্তান বোঝাতে চায় অবশ্যই বুঝবেন। আর যদি নেহায়েত অবজ্ঞাবশত আপনাকে এড়িয়ে যায় তাহলে অন্তত এটুকু বুঝবেন যে, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শনের কোনো শিক্ষা তাদেরকে দেওয়া হয় না।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনার বংশে কোনো নাস্তিক নেই, ধর্মবিদ্বেষী নেই। আপনি নিজেও স্রষ্টার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ ও তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করে থাকেন। আল্লাহ, আল্লাহর রসুল, ধর্মগ্রন্থকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কষ্টের রোজগার থেকে গরীব-দুঃখীকে দান করেন, জায়গা-জমি বিক্রি করে হজ্ব করে আসেন, সমাজের কল্যাণে অবদান রাখেন। কিন্তু আপনার সন্তান আজ এমন কী শিক্ষা লাভ করল যে, খোদ স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রশ্নেই সে সংশয় বয়ে বেড়াচ্ছে? এক শ্রেণির শিক্ষক শিক্ষা প্রদানের নাম করে আপনার ছেলে বা মেয়ের মনে-মগজে একটু একটু করে ধর্মবিদ্বেষ প্রবেশ করাচ্ছে, ফলে একটি পর্যায়ে পৌঁছে আপনার সন্তান শুধু নাস্তিকই হচ্ছে না, ঘোর ধর্মবিদ্বষী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে, যার সূত্র ধরে রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পরিসরে ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। যারা ধর্মবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে তাদের দলে হয়তো আপনার বিশ্ববিদল্যায় পড়–য়া বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসা সন্তানটিও আছে, কিন্তু আপনি তার কিছুই জানেন না। একবার চিন্তা করুন তো, ধর্মপ্রাণ একটি ছেলেকে মগজ ধোলাই করে ঘোর ধর্মবিদ্বেষী বানাতে একটি শ্রেণি কতটা বদ্ধ পরিকর ভূমিকা পালন করেছে? অথচ আপনি ঘুনাক্ষরেও তা টের পান নি। আজ এই ধর্মবিদ্বেষী ছেলেগুলো আপনার-আমার বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহ, আল্লাহর রসুল ও ধর্মগ্রন্থকে কতটা অরুচিকর ভাষায় গালাগালি করছে, প্রকাশ্যে লিখে বেড়াচ্ছে তার একটু নমুনাও যদি আপনি দেখতেন লজ্জা ও গ্লানিতে মরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকতো না। সন্তান কিন্তু আপনার, তাকে শিক্ষা-প্রদান করে মানুষের মতো মানুষ করার দায়িত্বও ছিল আপনারই, এটা আপনার এবাদতের অংশ ছিল, সেটা করতে আজ আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। একদিন এর জবাবদিহি আপনাকেও করতে হবে।
আপনি রাত-দিন পবিত্র কোর’আনকে ভালোবেসে চুমু খাচ্ছেন, আর আপনারই সন্তান আল কোর’আনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে, কী দাম রইল আপনার ভালোবাসার? যে নবীর নাম শুনলে আপনার চোখের কোন ভিজে যায় সেই নবীর শত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে আপনারই সন্তান যখন অকথ্য-অশ্লীল ভাষায় লেখালেখি করে, তখন আপনার ওই নবীপ্রেমের কোনোই মূল্য থাকে না। আপনার সন্তান তো এমন ছিল না? কে তাকে এমন বানালো? ভাবুন। উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। আর এড়িয়ে চলার উপায় নেই, বিষয়টি এড়িয়ে যাবার মতো নয়। জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনার সিদ্ধান্তের উপর। এখনই যদি না ভাবেন তাহলে অপেক্ষা করুন এর চেয়েও ভয়ংকর কোনো পরিণতির জন্য। কবরে গিয়েও শান্তি পাবেন না। হাশরের ময়দানে সর্বশক্তিমান ও চূড়ান্ত বিচারক আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে শুধু এই নিস্পৃহ-নির্জীব থাকার জন্য। আল্লাহ আপনাদের বোধোদয় ঘটিয়ে জাতিকে রক্ষা করুন।

রাশেদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

ওরা সওমকে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করেছে : হেযবুত তওহীদের এমাম

Avatar photo

Published

on

রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে বিশাল আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ ২০২৪) সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজধানীর ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-আইডিইবি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. তসলিম উদ্দীন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম সওমের নিয়ম, উদ্দেশ্য, শিক্ষা এবং দেশ ও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি, মুসলমানদের দুর্দশা এবং এ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সওম মানে আত্মসংযম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরত থাকা। রোযা তথা সওমের উদ্দেশ্য এই যে, মো’মেন ব্যক্তি সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, নিজের আত্মাকে শক্তিশালী করবেন। তিনি অপচয় করবেন না, পশুর ন্যায় উদরপূর্তি করবেন না। তিনি হবেন নিয়ন্ত্রিত, আত্মত্যাগী। বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষের দুঃখ অনুভব করে তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবেন অর্থাৎ তিনি হবেন তাকওয়াবান। তার এই চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে। গড়ে উঠবে এমন এক সমাজ যেখানে সবাই একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী হবে, বিরাজ করবে পরস্পর সহমর্মিতা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব। প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি।

তিনি আরও বলেন, আজকের বাস্তবতা এই যে, বর্তমানে এই মৌলিক শিক্ষা হারিয়ে সওম বা রোযা যেন হয়ে গেছে কেবল না খেয়ে থাকা। দেখা যায়, রমজান আসলেই মুসলিমদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া। সংযমের মাস এলেই মুসলিমদের সংযমের সব বাঁধ যেন ভেঙে যায়। আজ রোযাকে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্য পণ্যের দাম শুনে অসহায় হয়ে পড়ে। সবাই যেন অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। ধর্মব্যবসাও জমজমাট হয়ে ওঠে এই মাসে। এ জাতীয় অপরাধ ঢাকা দেয়ার জন্য আত্মপ্রচারের আশায় কিছু দান-খয়রাত করতে দেখা যায় মাত্র। কিন্তু রোযা তথা সওমে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ অর্থাৎ তাকওয়া সৃষ্টি হয়না, প্রকৃত সিয়ামের সাধনা হয় না মন্তব্য করেন তিনি।

উপস্থিত অতিথি ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, রোজার নির্দেশনাটা মূলত মো’মেনদের জন্য। তার মানে মো’মেনরা রোজা পালন করবে। প্রশ্ন হচ্ছে- এই মো’মেন কারা? তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও রাসুলের উপর ঈমান আনে, কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। এই মো’মেনের জন্যই হলে রোজা, নামাজ, হজ্ব সবকিছু। আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের জীবন ও সম্পদ আল্লার রাস্তায় কোরবান করে দিয়ে প্রকৃত মোমেন হবার চেষ্টা করছি বলেন তিনি।

এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তোলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তোলওয়াত করেন কারি মো. আসাদ। এরপর দলীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিন তার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, হেযবুত তওহীদের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা প্রমুখ।

এক পর্যায়ে হামদ নাত ও গজল পরিবেশন করেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পী শাহীন আলম, রাফে আহমেদ, তাহমিনা আক্তার চাঁদ, তাহী ও ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ। তাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় দর্শকরা।

দুপুর ২ টায় অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তার আগমনে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল।

নামাজ শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। বক্তব্য শেষে তিনি মানবজাতির শান্তি কামনা করে দোয়া করেন। মোনাজাত শেষে মাগরিবের আযান দিলে সবার মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়। অতিথিরা সবাই মিলে একাকার হয়ে ইফতার করেন।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহ নেওয়াজ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, হেযবুত তওহীদের সাহিত্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, মিরপুর শাখার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমেদ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, ঢাকা জেলার সভাপতি ইউনুস মিয়া, উত্তরা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিনসহ ঢাকার বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

Continue Reading

Highlights

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতীয় ঐক্যের ডাক হেযবুত তওহীদের

Avatar photo

Published

on

হেযবুত তওহীদের গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ মার্চ ২০২৪) বিকালে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন তেলিপাড়াস্থ সাগর সৈকত কনভেনশন হলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, রাজতন্ত্রের কবর হয়ে গেছে বহু আগে। ফ্যাসিবাদ মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বহু ফ্যাসিস্ট আত্মহত্যা করেছে। সমাজতন্ত্রও ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রও লাইফ সাপোর্টে আছে- মন্তব্য করেন তিনি।

হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য আমরা দেখেছি। প্রতি ৫ বছর পর পর মহা সংকটে পরতে হচ্ছে জাতিকে। একদল ক্ষমতায় গেলে পরের দিন থেকেই শুরু হয় তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা। সমানে চলে জ্বালাও পোড়াও। বাসে আগুন দিয়ে নিরপরাধ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। সাপের মত পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাবার লড়াইয়ে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘটের নামে নৃশংসতা মানুষ দেখেছে। এই সিস্টেম আর মানুষ দেখতে চায় না। মানুষের তৈরি সব সিস্টেমই তো আমরা অ্যাপ্লাই করলাম। সবগুলো ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের তৈরি তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে আল্লার দেওয়া সিস্টেমে প্রত্যাবর্তন করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমারা আমাদের ব্যাপারে মাতব্বরি করে আসছে বরাবরই। তারা একে একে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তাদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে আমার প্রিয় জন্মভূমির উপর। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাদের কূট চাল চালছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, শকুন যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে কোনো সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। হেযবুত তওহীদ থাকতে তাদের এই দুরাশা কোনো দিন পূর্ণ হবে না। প্রয়োজনে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জীবন দেব তবুও দেশকে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান হতে দিব না- বলেন এই নেতা।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহ নেওয়াজ খানের সঞ্চালনায় ও ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের আন্তর্জাতিক প্রচারণা বিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, হেযবুত তওহীদের সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দিন, দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান, হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান শাখার সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী, ঢাকা বিভাগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুস মিয়া ও মো. তসলিম উদ্দিন এবং হেযবুত তওহীদের গাজীপুর জেলা সভাপতি মো. শাহজাহান প্রধান, মহানগর সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

Continue Reading

Highlights

রাজধানীতে ‘বাংলা ভাষার মান রক্ষায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা

Avatar photo

Published

on

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘বাংলা ভাষার মান রক্ষায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচি-কাচার মেলা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হৃদয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ।

সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহ মুহাম্মদ সেলিম রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বাংলা ভাষা বিকৃত করার প্রবণতা তরুণদের মধ্যে বেশ লক্ষণীয়। অফিস-আদালত, চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপনসহ প্রায় জায়গাতেই চলছে বিদেশি ভাষার ব্যবহার। বিদেশি ভাষার আগ্রাসনে খাঁটি বাংলা ভাষার চর্চা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে কিছু সুশীল ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন। যার প্রভাব পড়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে। তারাও মিশ্র ভাষায় কথা বলতে শেখে। বেসরকারি বেতারগুলোর উপস্থাপকরা তো বাংলা বলেন না বললেই চলে। পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান সপ্তম। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য এবং সাহিত্যসম্ভারও বিপুল। অথচ নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষার প্রতি উৎসাহী ও মনোযোগী নয়। আরেকদিকে ইংলিশ মিডিয়ামের দৌরাত্বে অনেক ছেলেমেয়ে যদিও বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে কিন্তু লিখতে পারে না। একটু শিক্ষিতরা বাংলার সাথে ইংলিশ শব্দ মিশ্র করে ককটেল বানিয়ে ব্যবহার করে গৌরব করে। অন্যদিকে একজন অশিক্ষিত কৃষক শ্রমিকের কথায় যদি আঞ্চলিকতা প্রকাশ পায় তাকে আমরা ক্ষেত বলে পরিহাস করতে ছাড়ি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্য রাখছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

বক্তব্য রাখছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আমরা কি বাংলা ভাষাকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারছি? আমরা কি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারি? আমরা কি বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধ করতে পেরেছি? ১৯৪৮ সালে করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তানিরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়াসে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব করেছিল। আমরা কিন্তু তাদের অযৌক্তিক প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। হয়েছে প্রতিবাদ, আন্দোলন। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লিখছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কোনো মহল থেকেই এর কোনো প্রতিবাদ উঠছে না -বলেন এই বক্তা।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহারের প্রতি অনেকের আগ্রহ কমছে বলে মনে হয়। বিশেষ করে আমাদের শিশু ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষার প্রতি মমত্ব ও আগ্রহ নিয়ে উদাসীনতা মোটেও ভালো কিছু নয়। শিশু ও তরুণদের একাংশ বাংলার চেয়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। এর জন্য আমাদের বিদ্যমান পরিস্থিতিও অনেকাংশে দায়ী। ইংরেজি ভাষা শিক্ষা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু নিজের ভাষাকে অবহেলা করার পক্ষেও আমি নইÑ বলেন হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

তিনি বলেন, ‘বিমা-ব্যাংকে গেলে বাংলার ব্যবহার প্রায় অদৃশ্য। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়; এমনকি কর্মরতদের নাম, পদবিও থাকে ইংরেজিতে। ব্রিটিশরা আমাদের মনে পরনির্ভরতা ও বিদেশি ভাষার প্রতি যে অনুরাগ তৈরি করে গেছে, সেটি বদলাতে হবে। বিদেশি শব্দ ও ভাবধারার প্রতি আমাদের দুর্বলতা দূর করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ সরকারিভাবে তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহারে সাফল্য দেখিয়েছে; তাহলে আমরা কেন পারব না?”

সবশেষে তিনি বলেন, মানবজাতি এক জাতি। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ইসলামের নিষিদ্ধ। সব ভাষাই আল্লাহর দেওয়া। প্রকৃতির বৈচিত্র্য যেমন স্বাভাবিক তেমনি ভাষার বৈচিত্র্যও স্বাভাবিক। ইসলাম ভূপ্রকৃতির কারণে জাতীয়তাবাদ এবং ভাষার কারণে বিভিন্নতার কারণে জাতীয়তাবাদ কোনটাকেই স্বীকার করে না। ইসলামের বিধানে সমস্ত মানুষ এক জাতি ভাষার কারণে কোনো জাতি অন্য জাতির উপরে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, লায়ন কেফায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবির, অতিথি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও লায়ন সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রূপা আহমেদ, দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি রিয়াদুল হাসান প্রমুখ।

বিশেষ অতিথি মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি রিয়াদুল হাসান তার বক্তব্যে বর্তমানের বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সুশৃঙ্খল রূপ তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা তার বক্তব্যের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দপ্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।

সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশিত ভাষার গানে দেশের গানে মুখরিত হয় মিলনায়তন।

Continue Reading