Connect with us

দেশজুড়ে

তিস্তার ক্যানেল গুলোতে পানি উপচে পড়ছে-শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি

Published

on

01_14256মঙ্গলবার রাত ৮ টায় হটাৎ করে তিস্তার কমান্ড এলাকার সেচ ক্যানেল গুলোতে পানি উপচে পড়ছে। বুধবার দুপুর ১ টা পয্যন্ত থৈথৈ করছে তিস্তার পানি। ফলে তিস্তা ব্যারাজের যে ৪৪টি গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল তা রাত ৮ টায় খুলে দিয়ে নদীর পানি ভাটিতে ছেড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যেিরজ কতৃপক্ষ। ফলে নদীর পানি এখন তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে ¯্রােতধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে পর্যান্ত সেচ পাচ্ছে  নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ৬৫ হাজার হেক্টর বোরো ক্ষেত গুলো। তিস্তা পলি মিশ্রিত সেচের পানি পেয়ে বোরো ক্ষেত গুলো জীবন ফিরে পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে,গত শুক্রবার রাত থেকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা মঙ্গলবার রাত ৮ টায়   প্রায় ৭ হাজার কিউসেকে প্রবাহিত হতে থাকে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের ক্যানেল গুলোর প্রতিদিন পানির ধারনের ক্ষমতা ৫ হাজার কিউসেক। সেখানে নদীতে অতিরিক্ত পানি থাকায় সেই পানি তিস্তা ব্যারাজের ভাটির নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদী এখন পানিতে যেমন ভরে উঠছে তেমনি পর্যান্ত সেচ পাচ্ছে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ৬৫ হাজার হেক্টর বোরো ক্ষেত গুলো। আকস্মিক বন্যার পানির কারণে চরের কয়েকশত হেক্টর জমির বরি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নির্ভনযোগ্য সূত্র মতে, অচিরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ ছাড়া গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তিনদিনের বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। তিনি বাংলাদেশ কে বলে গেছেন তার উপর আস্থা রাখার জন্য। ফলে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজেই নিয়েছেন। সকলে আশা করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশ সফরে এলে তিস্তার পানি চুক্তির সমাধান হবে।
তিস্তা কমান্ড এলাকার সেচভুক্ত কৃষকরা বলছে এখন তিস্তা প্রকল্পের সেচের পানি রাখার স্থান নেই। এত পানি এসেছে যা এর আগে পাওয়া যায়নি। এখন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বোরো ক্ষেত গুলো তিস্তার সেচের পানিতে ভরে থাকছে। তিস্তার পানি চুক্তি এ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে না হলেও উজান থেকে বর্তমানে যে পানি আসছে তাতে তিস্তা নদী অনেকাংশে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বলে তিস্তা পারের মানুষজন মনে করছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দাঁড়িয়ে ছিল ১০০কিউসেকে। অথচ এ নদীতে স্বাভাবিকভাবে গড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করে। এ অবস্থা চলে ২ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির বিষয়টি অবাক করে দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে। তিস্তার পাড়ের আবুল কাশেম জানায়, তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকায়ে যায় তখন হারিয়ে যাওয়া জমি-জিরাত বালুর চরে চোখে পড়ে বুকটা খাঁ-খাঁ করে উঠে। পুর্ব ছাতনাই গ্রামের হারুন-অর রশিদ জানায়, সোমবার ভোর থেকে হঠাৎ শুনতে পাই তিস্তা নদী থেকে ¯্রােতের শব্দ ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ছুটে যাই নদীর পাড়ে। দেখতে পাই উজান থেকে তিস্তার পানি শো-শো শব্দে ভারতের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এখন তিস্তা নদী দেখে খুব ভালো লাগছে তিস্তায় পানি ভরে উঠছে।
তিস্তাপাড়ের ভাষানীর চরের নৌকা মাঝি হাফিজার রহমান (৪২) বললেন, ভারত হয়তো তাদের গজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ায় পানির জোয়ার বেড়ে গেছে। তিস্তা সেচ ক্যানেলের ধারে নাউতরা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন ( ৪৩) জানায়, হঠাৎ করে তিস্তা সেচখাল পানিতে ভরে গেছে। এখন দেখছি পানি রাখার জায়গা নাই। এই পানি খুব উপকারে আসছে। এখন বোরো ধানের শীষ ধরেছে। এই পানি পেয়ে ধানের ক্ষেতগুলো তরতাজা হয়ে ফুটে উঠেছে। তিস্তার পলির পানি আরে ভু-গর্ভের সেচের পানির মধ্যে ফারাক আছে। তিস্তায় পানি আসায় চলছে নৌকা। আর তিস্তাপাড়ের জেলেরা মনের আনন্দে মাছ ধরছে ।
অপর দিকে তিস্তার বিভিন্ন চরে বরি শস্য তিস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পেয়াজ, মরিচ, ভুট্টাসহ বরি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ রাফিউল বারী জানান, বোরো আবাদের শুরুতে তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় সেচের জন্য শুধু নীলফামারী জেলার ২৮ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। সে মাফিক রেশনিং করে সেচ দেওয়া হচ্ছিল। এখন নদীতে উজান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি আসছে নদীতে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে এখন ৬৫ হাজার হেক্টর জমি তিস্তা সেচ প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *