ঠাকুরগাঁও
ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া দু’দেশের মানুষের মিলন মেলা
আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল প্রতিনিধি:
পহেলা বৈশাখে প্রতি বছর বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে দুই দেশের বাঙালিরা পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া এই সাক্ষাতের সুযোগ পান। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌছে যায় দেশকালের সীমানা ডিঙিয়ে।
১০ বছর পর ছোট ভাইয়ের দেখা পেয়ে নীলফামারী থেকে আসমা খাতুন (৬০) চোখে আনন্দাশ্রু যেন বাধ মানছিল না ভাই কবির হোসেন থাকেন ভারতের জলপাইগুরি জেলার রায়গঞ্জ থানায়। এতদিন অভিমানে দেখা না হলেও আজ রক্তের টান ঠিকই তাদের হাজির করেছে কাঁটাতারের দুই পারে।
রাণীশংকৈল সীমান্তের জগদল ৩৭৩ ও ধর্মগড় ৩৭৪ হরিপুরের ৩৬৮ থেকে ৩৭১ মোলানী, ডাবরী, বেতনা,অপর দিকে ভারতের নারগুন, গোয়ালীনআমবাড়ি, ফুলবাড়ি, ডাঙিপাড়া, শ্রীপুর ক্যাম্পের রক্ষী বাহিনী বিএসএফের সম্মতিতে নাগরভিটা নদীর পাড়ে দু’বাংলার মানুষের ঢল দেখা গেছে।
বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতে কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাইকেল, অটোরিক্সা, মাইক্রো, মিনিবাস, করে, খুব সকালে তারা হাজির হোন। এর পর চলে প্রতিক্ষার প্রহর।
বুধবার বিজিবি ও বিএসএফের সুব সংকেতে দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত চলে এ মিলন মেলা। সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এসে জড়ো হন সীমান্তে, দির্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউ। প্রতি বছর দু’দেশের স্বজনদের এ মিলন মেলা এখানে এক বিরল দৃশ্যের জন্ম দেয়।
লাখো মানুষ কথা বলেছে এই দিনে তাদের প্রিয় স্বজনদের সাথে। দু’ দেশের সীমারেখা কাটাতার দিয়ে আলাদা করা হলেও আলাদা করা যায়নি তাদের ভালবাসার টান। দীর্ঘদিন দুরে থাকা, দেখা হওয়ায় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আবার কেউ প্রিয়জনের দেখা না পেয়ে বাড়ি যেতে হয় চোখে পানি নিয়ে।
দু’দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সাধারণ মানুষ টাকা পয়সার অভাবে পাসপোর্ট ভিসা করতে পারেন না তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। সারা বছর দু’বাংলার মানুষ অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে। এই মিলন মেলায় দু’বাংলার লাখো মানুষ মিলিত হয়ে সেরে নেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ও কুশল বিনিময়।
ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশের ও লাখো নারীপুরুষ সমবেত হয়। প্রতিবছর এই পহেলা বৈশাখে কাটা তারের দু’পাশে সকাল থেকে ভীড় জমে উঠে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
জামাই ইন্দ্রনাথ ভারতীয় সীমান্তে ও শ্বাশুড়ী গীতারাণী বাংলাদেশ সীমান্তে সঙ্গে নাতী নাতনি সবাই সবার সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা বলছে।গীতারানী বলেন ৫ বছর পর জামাই ও মেয়ের দেখা পেলাম একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারছিনা। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া।
ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেখার কিন্তু ছুতে পারছিলামনা। জড়িয়ে একটু চিৎকার করে কান্না করি তবে হয়তো দির্ঘদিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে একটু রেহাই পেতাম বলছিলেন ভারতের শ্রীপুরে থাকা ছোট বোন নাজনিনকে দেখতে আসা দিনাজপুরের মকবুল হোসেন।
হরিপুর মোলানী ক্যাম্প, কো: কমান্ডার শ্রী: অমেশ পাল জানান শুরুতে বিএসএফের সমর্থন ছিল না ভারতীয়, নাগরিকদের চাপ থাকা ও কাটাতারের কাছে আসায় তারা অনুমতি দেয়। রাণীশংকৈল জগদল ক্যাম্প, কো: কমান্ডার নুরুল আমিন বলেন স্থানীয় মানুষের অনুরোধ এবং বিএসএফের সংঙ্গে আলোচনা করে কাটাতারের বেড়ার জিরো লাইনে সল্প সময়ের জন্য এ উদ্যেগ
রাণীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান আইনুল হক মাষ্টার বলেন, ১৯৭৪ সালে পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধিনে ছিল। এ কারনে দেশ বিভাগের পর আত্মীয় স্বজনেরা দু’দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারেননা। অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির।