Connect with us

জাতীয়

ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আগামীকাল ভোট উৎসব : ভোটার ৬০ লক্ষাধিক

Published

on

 

ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আগামীকাল ভোট উৎসব। নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এখন উৎসবের আমেজ।  কাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। উৎসমুখর পরিবেশে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক ভোটার এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ গতকাল বাসস’কে বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সব ধরনের ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের তিনি ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটারদের অনুরোধ করব- তারা যেন ‘ফেষ্টিভ (উৎসব) মুডে’ ভোট কেন্দ্রে যান। এই নির্বাচনে অন্য সময়ের তুলনায় তিন-চারগুন বেশি আইন-শৃঙখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।’ ৭ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই গতকাল মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা তিন সিটির ‘নগরপিতা’ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা।

সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ মে। এরপর নানান জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় সাদেক হোসেন খোকা অতিরিক্ত ৪ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। নগরবাসীকে অধিকতর সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ডিসিসিকে উত্তর ও দক্ষিণ এ দু’ভাগে বিভক্ত করেন। এরপর থেকে প্রশাসক নিয়োগ করে চালানো হচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৮ বছর পর দুই নগরপিতা পেতে যাচ্ছেন রাজধানীবাসী। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটিতে সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৭ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। ভোটারদের নিরাপত্তা আর ভোটদান নির্বিঘœ করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ইসি সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আনসার, পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি মিলে প্রায় ৮০ হাজারের মতো নিরাপত্তাকর্মী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। এদের সঙ্গে মাঠে থাকবেন ৫শ’ ম্যাজিস্ট্রেট।

ইসি সচিব জানান, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিরাপত্তায় থাকবে। এ বিবেচনায় ২ হাজার ৭০৫টি ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬২ হাজার নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। এছাড়া তিন সিটি’র প্রতি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সেই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র বিবেচনায় ৭০ প্লাটুন বিজিবি, ৭ প্লাটুন কোস্টগার্ড ও র‌্যাবের ১শ’টি টিম কাজ করবে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব-পুলিশের বিশেষ টিম থাকছে। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে তিন ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা যখনই মনে করবেন, বার্তা পেয়ে তখনই সেনাবাহিনী চলে আসবে।

আজ সকাল থেকেই তিন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ব্যালট পেপারসহ সবধরনের মালামাল প্রিজাইডিং অফিসারদের বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।
নির্বাচনে তিন সিটিতে ৪৮জন মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সবমিলিয়ে ১ হাজার ১৮৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ২৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৮৯জন। দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, সাধারণ কাউন্সিল পদে ৩৯০ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন। চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন লড়াইয়ে রয়েছেন ।

সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কমিশন প্রিসাইডিং, সহকারি প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার এই তিনটি পদে ৪৯ হাজার ৩৩৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে প্রিসাইডিং অফিসার ১ হাজার ৯৩জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৮৯২ জন ও পোলিং অফিসার ১১ হাজার ৭৮৪জন। দক্ষিণে প্রিসাইডিং অফিসার ৮৮৯ জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৭৪৬ জন ও পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৪৯২ জন। চট্টগ্রামে প্রিসাইডিং অফিসার ৭১৯ জন, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৯০৬ জন এবং পোলিং অফিসার ৯ হাজার ৮১২ জন। এছাড়া উত্তর সিটিতে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১২ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার, দক্ষিণে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১৯ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসার এবং চট্টগ্রামে ১ জন রিটার্নিং অফিসার ও ১৪ জন সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ মোট ৪৮ জন কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন।

তিন সিটিতেই ভোটকেন্দ্র পাহারায় গোপন পর্যবেক্ষক হিসেবে ৪৫ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছে ইসি। কমিশনের তথ্যমতে, দক্ষিণ সিটিতে ১৯ জন, উত্তরে ১২ জন এবং চট্টগ্রামে ১৪ জন কর্মকর্তা এ দায়িত্ব পালন করবেন। তারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটার এবং প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করবেন। নির্বাচন চলাকালীন কেন্দ্রের ভিতর কিংবা বাইরে কোন অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক রিটার্নিং অফিসার এবং কমিশনকে জানাবেন তারা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৩৬ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি। এখানে ভোটার ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১জন, নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৯টি। এখানে ভোটার ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬জন, নারী ভোটার ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭জন এবং চট্টগ্রাম সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৪১ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৪ । এখানে ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩জন, নারী ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬জন। ভোটকেন্দ্র উত্তরে ১ হাজার ৯৩ ও ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৮৯২টি, দক্ষিণে ভোটকেন্দ্র ৮৮৯ ও ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৭৪৬টি এবং চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্র ৭১৯ ও ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৯০৬টি।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। ভোটের দিন নির্বাচনী কাজ ছাড়া সকল প্রকারের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ এলাকার বাসিন্দা ছাড়া ২৫ এপ্রিল থেকেই বহিরাগত ব্যক্তির অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত সিটি এলাকায় কোন বহিরাগত অবস্থান করলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকেই মোটর সাইকেল এবং ২৮ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২৯ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত সব ধরনের মোটরযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে প্রার্থী, প্রশাসন ও অনুমোদিত ব্যক্তি এবং জাতীয় হাইওয়ের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *