Connect with us

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের ছিটমহলে যৌথ জনগননা শেষ আজ-নাগরিকত্ব নির্দ্ধারনে মতামত দিচ্ছে ছিটবাসীরা

Published

on

Kurigram Sitmohol photo- 2

শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে ১২ টি ছিটমহলসহ বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২টি ছিটমহলে আজ শেষ দিনেরমত চলছে যৌথ জনগননা। ৬জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকারীভাবে জেলার অভ্যন্তরে ১২টি ছিটমহলে উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে ছিটবাসীরা তাদের নাগরিকত্ব নির্দ্ধারনে মতামত দিচ্ছে।

১৫ জুলাই পর্যন্ত কুড়িগ্রামের ১২ টি ছিটমহল থেকে ৩শ ৩০ জন বাসিন্দা মুল ভুখন্ড ভারতে যাওয়ার মতামত দিয়েছে। এছাড়াও লালমনিরহাটের ৫৯টি, পঞ্চগরের ৩৬টি ও নীলফামারীর জেলার ৪টি ছিটমহল থেকে ৯শ ৭০ জন ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার মতামত দিয়েছে।

১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী এ সমীক্ষা কাজের মধ্যে নির্ধারন হবে কে কোন দেশের নাগরিক হতে চায়। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবে ছিটবাসীরা।

হালনাগাদ কার্যক্রমে ২০১১ সালের পর ছিটমহলে জন্ম নেওয়া শিশু ও বৈবাহিক সুত্রে ছিটমহলের বাসিন্দা হলে তাদেরকেই সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়াসহ কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে ১২ টি ছিটমহলে যৌথভাবে দু’দেশের ১০ টি সমীক্ষা টিম কাজ করছেন। প্রতিটি টিমে ভারতের ১ জন ও বাংলাদেশের ১ জন করে কাজ করছেন।

এছাড়া নাগরিকত্ব নির্ধারণ ও হেড কাউন্টিং হালনাগাদ নির্বিঘেœ করার পাশাপাশি অন্যান্য জটিলতা এড়াতে গত ২২ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলের জমি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ রাখাসহ সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তসমূহ বিজ্ঞপ্তি আকারে ছিটমহবাসীদের অবগত করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ৫১টি ছিটমহল ভারতের অন্তর্ভূক্ত হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে ১৬২টি ছিটমহলে ৭৫টি টিম দু’দেশের যৌথ সমীক্ষা কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে ২৫ টি ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৫০টি টিম কাজ করছে। প্রতি টিমে একজন বাংলাদেশী ও একজন ভারতীয় রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা মিজানুর রহমান, হাবিবুর রহমান জানান, আমরা যেহেতু ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলাম সেহেতু আমরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে চাই। তাছাড়া বাংলাদেশ ছোট দেশ, এখানে তেমন কাজ পাওয়া যায় না। ভারত বড় দেশ সেখানে কাজের অভাব নাই। এজন্য আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

একই ছিটমহলের বাসিন্দা হরি চরন, টেপু চন্দ্র, কামিনী কান্ত ও নারায়ন বাবু জানান, আমাদের ঘনিষ্ঠ জনেরা ভারতে থাকায় আমারা ভারতীয় নাগরিক হতে চাই। এজন্য আমরা ফরম পুরন করেছি। আমরা ভারতে যেতে চাই এজন্য যে মৃত্যুর সময় যেন আমাদের আপন জনেরা কাছে থাকে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের সবচেয়ে বড় ছিটমহল কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের সভাপতি মোঃ আলতাফ হোসেন জানান, ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুধু মাত্র দাসিয়ার ছড়া ছিটমহল থেকে ২শ ৪৫ জন ভারতীয় নাগরিক হওয়ার মতামত ব্যাক্ত করেছে। ১৬ জুলাই পর্যন্ত এ সংখ্যা বাড়তে পারে।

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি, ভারত ইউনিটের সাধারন সম্পাদক, দিপ্তীমান সেনগুপ্ত জানান, আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরের ৫১টি ছিটমহল থেকে একজন বাসিন্দাও বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার জন্য মতামত প্রকাশ করেননি।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারন সম্পাদক, গোলাম মোস্তফা জানান, ছিটমহলবাসীরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে জরিপ কাজে অংশ নিচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে ১৬২ টি ছিটমহলে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল থেকে কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ১৩০০ জন ভারতের নাগরিক হওয়ার মতামত দিয়েছে। ১৬ জুলাই পর্যন্ত এ সংখ্যা আরো বাড়বে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল-আমিন জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শেষ হচ্ছে ছিটমহল গুলোতে জনগননা ও ভারত-বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার মতামত প্রকাশের কাজ। আগামী ২০ জুলাই পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে ছিটবাসীদের ডাটা এন্ট্রি কাজ সম্পন্ন হবে। ২১ জুলাই রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আনুষ্ঠানিক ভাবে জরিপের কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে। তারপর ১ আগষ্ট নাগরিকত্ব ফাইনাল হলে তাদের উন্নয়নে কাজ শুরু হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *