ফিচার
‘এখন আমিও জবাই করতে পারি’
কয়েক মাসে বদলে গিয়েছে জীবনটা। ‘ওরা’ মানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরাই কেড়ে নিয়েছে তাহা-র মতো কয়েকশো শিশুর শৈশব। সংবাদমাধ্যমের কাছে গল্প করতে করতেই ইয়াজিদি কিশোরের এমন সরল স্বীকারোক্তি।
উত্তর ইরাকের দহুকের এক শরণার্থী শিবিরে বসে নিজের গল্প বলতে গিয়েও শিউরে ওঠে তাহা। কারণ আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবিরের দিনগুলি এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়।
অথচ এক বছর আগেও জীবনটা এ রকম ছিল না। উত্তর ইরাকের সিনজার পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম কোচো। সেখানেই সুখে শান্তিতে দিব্যি কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি। কিন্তু বাদ সাধল ওই জঙ্গিরা। এক দিন তাহা-র স্কুলকেই ঘাঁটি বানাল জঙ্গিরা। সেই শুরু। তার পর চলতে থাকল জঙ্গিদের তাণ্ডব। বদলে যেতে থাকল তাহা-র চিরচেনা ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট গ্রামটা। আচমকা এক দিন গ্রামের পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা আলাদা দু’টি লাইনে দাঁড় করালো ‘ওরা’। এর পর গ্রামের মহিলাদের মসুলে পাঠিয়ে নারী পাচারকারীদের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হল। আর গ্রামের পুরুষদের একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মাটিতে শুইয়ে গুলি করে মারল ‘ওরা’। সে দিনই বাবা ও পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল তাহা।
এর পর ওই কিশোরের ঠাঁই হয় আইএসের প্রশিক্ষণ শিবির। সেখানে তাহা-র মতোই আরও অনেক শিশু এবং কিশোর। শুরু হল তার নতুন জীবন। ধর্মগ্রন্থ পাঠের সঙ্গে চলত অস্ত্র প্রশিক্ষণও। শিবিরের ছাত্রদের ‘ওরা’ বলত, ‘‘ধর্মান্তরিত না হলে নিজেদের বাবা-মাকেও খুন কর।’’ ইতিমধ্যেই তাহা-র বেশ কিছু বন্ধুর শরীরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তাহা-র চোখেমুখে তাই এখনও আতঙ্কের ছাপ।
তাহা জানিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই ক্লাসে আসত জঙ্গি ‘শিক্ষকরা’। সেখানেই তারা ছাত্রদের হাতে ধরিয়ে দিত ধারালো ছোরা। আর তা দিয়েই মাথা কাটার অভ্যাস করতে হতো তাহা-সহ অন্য ছাত্রদের। আর ঠিকমতো অস্ত্র ধরতে না পারলেই কপালে জুটতো বেধড়ক মার। পাশাপাশি, প্রশিক্ষণ শিবিরের নিয়ম না মানলেও চলতো মারধর। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হতো না। খাবারের মধ্যে কিলবিল করত পোকা। এমন নোংরা পচা খাবার খেয়েই কোনও রকম দিন কাটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরের ওই শিশু ও কিশোরদের।
মাঝেমধ্যেই শিশুমনে প্রশ্ন জাগে, কেন এমন হত্যালীলা?
এর উত্তর অবশ্য তারা পেয়ে যেত, জেহাদি সৈন্যবাহিনী বানানোর জন্যই আইএসের এমন উদ্যোগ। যার জোরে তারা খতম করতে পারবে ইসলামের শত্রুদের। ওই জেহাদি সেনাদের সাহায্যেই গোটা আমেরিকা এবং পশ্চিমী দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে আইএস।
নৃশংসতার পথ ধরেই ধীরে ধীরে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার পথে এগিয়ে চলেছে আইএস জঙ্গিরা। আর নিশানা বানাচ্ছে, তাহা-র মতো শিশুদের। খেলনার জায়গায় তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বন্দুক অথবা ছোরার মতো অস্ত্র। এ দিকে আজই সিরিয়ার এক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, মধ্য সিরিয়ার এক গ্রাম থেকে অন্তত ২৩০ জন নাগরিককে অপহরণ করেছে আইএস জঙ্গিরা। অপহৃতদের মধ্যে প্রায় ষাট জন খ্রিস্টান।
এমন পরিস্থিতিতেও অবশ্য আইএসের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহা-র মতো অন্য শিশু ও কিশোররাও। তবে সবার ভাগ্য তাহা-র মতো নয়। তাহা কোনও রকমে পালিয়ে এসেছিল জঙ্গিদের কবল থেকে। তবে বাকিরাও পালানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কবে তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে, এখন তারই অপেক্ষা।সূত্র: আনন্দ বাজার
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/পি