Connect with us

আন্তর্জাতিক

টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ১৪তম বার্ষিকী আজ

Published

on

150119125035_terrorism95percent_dhub_twin_towers_640x360_getty

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার ১৪তম বার্ষিকী আজ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (টুইন টাওয়ার), পেন্টাগন ( মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর) এবং সেঙ্কসভিলে একযোগে এ হামলা চালিয়েছিল চরমপন্থী সংগঠন আল কায়েদার ১৯ সদস্য। হামলার মাত্র এক ঘন্টা ৪২ মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের প্রতীক ১১০ তলা টুইন টাওয়ারটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এ হামলায় নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ। আহত হয় আরো প্রায় ছয় হাজার মানুষ।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সকাল ৭ টা ৫৯। বোস্টনের লোগান বিমানবন্দর থেকে লস অ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশে ৯২ জন আরোহী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি। বিমাটিতে যাত্রী বেশে ছিল পাঁচ ছিনতাইকারী । পাইলটকে ছুরিকাঘাত করে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। সকাল ৮ টা ৪৬ মিনিটে বিমানটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত হানে। ভবনটির ৯৩-৯৯ তলার ভেতর দিয়ে ঢুকে যায় বিমান।

সকাল ৮ টা ১৪ মিনিটে লোগান বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট-১৭৫ যাত্রা করে লস অ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশে। পাঁচ ছিনতাইকারীসহ বিমানটিতে ছিল ৬৫ জন আরোহী। সকাল ৯ টা তিন মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণাংশ সাউথ টাওয়ারে আঘাত হানে এটি।

ফ্লাইট নম্বর ৭৭। বোয়িং ৭৫৭ বিমানটি ওয়াশিংটন দুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৪ জন আরোহী নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। এই বিমানেও ছিলেন পাঁচ ছিনতাইকারী। সকাল ৯ টা ৩৭ মিনিটে পেন্টাগনে আঘাত হানে এটি।

ফ্লাইট নম্বর ৯৩। সকাল ৮ টা ৪২ মিনিটে সান ফ্রান্সিসকোর উদ্দেশে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বোয়িং ৭৫৭ বিমানটি। এতে ছিল ৩৩ জন যাত্রী, সাতজন ক্রু ও চার ছিনতাইকারী। বিমানটি দিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজে হামলা চালাতে চেয়েছিল ছিনতাইকারীরা। তবে যাত্রীদের চেষ্টায় ছিনতাইকারীরা ব্যর্থ হয়। বিমানটি সকাল ১০ টা তিন মিনিটে পেনসিলভানিয়ার সেঙ্কসভিলের একটি মাঠে আছড়ে পড়ে।

স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা ৪৮ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার খবর প্রথম টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। বীরদর্পে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো টাওয়ারই ধীরে ধীরে ধসে পড়ছিল। মাত্র এক ঘন্টা ৪২ মিনিটের মধ্যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল টাওয়ার দুটি। গোটা ম্যানহাটনই যেন কালো ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে গিয়েছিল। চারপাশে হাজার হাজার মানুষের ভিড় আর আর্তনাদ। রাস্তায় পুলিশের গাড়ি আর এম্বুলেন্সের বিকট শব্দ। সব মিলিয়ে এক বিভিষিকাময় পরিস্থিতি।

চারটি হামলায় মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হয়েছিল। এদের মধ্যে কেবল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও এর আশেপাশের এলাকায় নিহত হয়েছিল ২ হাজার ৬০৬ জন। পেন্টাগনে নিহত হয়েছিল ১২৫ জন। হামলায় নিহতরা বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। তবে তাদের মধ্যে ৭২ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ৩৪৩ জন অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও ৫৫ জন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। ধারণা করা হয়, হামলায় নিহতদের মধ্যে ৫০ জন বাংলাদেশি ছিলেন। তবে মাত্র ছয়জনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন, পেশাজীবি মোহাম্মদ সাদেক আলী, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের একটি রেস্টুরেন্টের কর্মজীবি সাব্বির আহমেদ ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, নিউ ইয়র্কের বীমা খাতে কর্মরত আবু কাসেম চৌধুরী, প্রকৌশলী নুরুল হক মিয়া ও তার স্ত্রী শাকিলা ইয়াসমিন।

একথা বলা যায়, নাইন ইলেভেনের সেই হামলা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছিল। এ ঘটনার তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন । সেই অভিযানের অংশ হিসেবে হামলা চালানো হয়েছিল আফগানিস্তান। পরবর্তীতে ইরাকেও এই তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

আসলে নাইন ইলেভেন দুনিয়া বদলে দিয়েছিল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর ১৪ বছর কেটে গেছে৷ দেখলে মনে হবে, বিশেষ কিছু বদলায়নি৷ কিন্তু বাস্তবে বদলে গেছে অনেক কিছুই।

নিউইয়র্কে স্থাপিত হয়েছে সেই নাইন-ইলেভেন স্মৃতি বিজড়িত জাদুঘর। টুইন টাওয়ার ভেঙে পড়ার স্থান ট্রিনিটি স্ট্রিটের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে নির্মিত এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। হামলায় নিহত প্রায় তিন হাজার মানুষের অধিকাংশেরই নামসহ ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস জাদুঘরটিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এ জাদুঘরে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষসহ হামলার ঘটনায় নিখোঁজদের পোস্টার। এমনকি উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা মারা গেছেন সে সব উদ্ধারকর্মীদের নাম।

নাইন-ইলেভেন আজও রহস্যাবৃত। আজ অবধি জানা যায়নি নাইন-ইলেভেন হামলার প্রকৃত রহস্য। এ হামলার জন্য সেই সময় দায়ী করা হয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আল কায়দাকে। তবে আমেরিকারও বহু বিশেষজ্ঞ টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় মার্কিন সরকারেরই হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

হামলার বিষয়ে আল কায়দাপ্রধান ওসামা বিন লাদেনের দাবি ছিল, `আমি বা আমরা এ কাজ করিনি। তবে যারাই করুক আমরা এ ঘটনায় আনন্দিত।`

নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি রোষানলের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। তাদের প্রতি সব সময় অভিযোগের তীর ছোড়া হয়েছে। যদিও এর পেছনে এখনও উপস্থাপন করা হয়নি শক্তিশালী কোনো যুক্তি।

বাংলাদেশেরপত্র.কম/এডি/আর

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *