Connect with us

জাতীয়

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন কতটা যৌক্তিক?

Published

on

dhaka_university_640x360_bbc_nocredit

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা আর অন্য প্রশাসনিক কাজ চললেও শ্রেণীকক্ষ ফাঁকা। শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসে হয়তো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন নতুন নয়তো নিজেদের মধ্যে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের করিডরে একজন ছাত্র বলছিলেন ৮ম বেতন কাঠামো নিয়ে শিক্ষক ও সরকারের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণেই এটি হয়েছে।
তিনি বলেন সরকারও ছাড় দিতে চায় না, শিক্ষকরাও ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয় বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের প্রতিবাদে দেশটির ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সোমবার থেকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শুরু করেছে।
শিক্ষকরা বলছেন এই ক্লাস বর্জনের বিষয়ে সরকারকে বারবার সতর্ক করে দিলেও বৈষম্য নিরসনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।সম্প্রতি বাস্তবায়ন হওয়া ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। বেতন কাঠামোতে বড় ধরনের উল্লম্ফন হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বৈষম্যের অভিযোগ তুলছেন কেন? আজ থেকে যে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি হবে সেটি শিক্ষকরা বহু আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে দফায় দফায় তারা প্রতীকী কর্মবিরতি, কালো ব্যাজ ধারণ ও মানব বন্ধনের মতো কর্মসূচী পালন করেছে।
শিক্ষকরা বলছেন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ২৫ শতাংশ এক নম্বর গ্রেড অর্থাৎ সচিবদের সমান মর্যাদা ও বেতন কাঠামোতে যেতে পারতেন।
কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোতে আগের তুলনায় এখন অর্ধেক সংখ্যায় অধ্যাপকরা ১ নম্বর গ্রেড অর্থাৎ সচিবদের সমকক্ষ হতে পারবেন। অধিকাংশ অধ্যাপক দুই কিংবা তিন নম্বরে থাকবেন। এটি নিয়েই তাদের আপত্তি।
শিক্ষকরা বলছেন, বেতন যে যথেষ্ট বেড়েছে সেটি তারা স্বীকার করছেন। কিন্তু আগে অধ্যাপকদের যে অবস্থান ছিল, নতুন বেতন স্কেলে সেখান থেকে অবমূল্যায়ন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলছেন, একজন শিক্ষক হিসেবে এ ধরনের কর্মবিরতি তার জন্য বিব্রতকর। কিন্তু এছাড়া উপায় ছিলনা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কারণ এই ক্লাস বর্জনের আগে শিক্ষকরা নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন শিক্ষকদের দাবীর বিষয়টিকে ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষকদের আত্মসম্মানে আঘাত দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “আগে অধ্যাপকরা এক নম্বর গ্রেডে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন শিক্ষকরা তৃতীয় গ্রেডের উপরে যেতে পারবেনা।”
বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সেটি রক্ষা না করে উল্টো বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে উস্কানি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শিক্ষকরা তাদের দাবি নিয়ে যতোই জোরালো ব্যাখ্যা দিক না কেন, এই ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের প্রভাব কী হবে সেটি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই শিক্ষকদের দাবির সাথে একমত হলেও ক্লাস বর্জন কর্মসূচির সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন ছাত্রী বলেন, “ওনাদের (শিক্ষকদের) প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষা দান করা। ওনারা যদি সে দায়িত্ব থেকে সরে আসেন, তাহলে তো ঠিক না।”
আরেকজন ছাত্রী প্রশ্ন তোলেন, “শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে, ক্লাস না নিয়ে তারা যে আন্দোলন করছেন সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত?” ধর্মঘট চলাকালে নিজ কক্ষেই দেখা পেলাম দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. সালেহকে । জিজ্ঞেস করেছিলাম, ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই যে প্রশ্ন তুলছেন, সেটিকে তিনি কিভাবে দেখছেন? অধ্যাপক সালেহ বলেন, “ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীদের অসুবিধার সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য না। আমরা বাধ্য হয়েছি।”
ক্লাস বর্জনের কারণে যে ক্ষতি হবে সেটি পরবর্তীতে বাড়তি ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন এ আন্দোলন চললে কিছুটা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে অধ্যাপক সালেহ উল্লেখ করেন। শিক্ষকরা আশা করছে তাদের দাবি পূরণ করে সমস্যার সমাধান করা হবে। কারণ এ আন্দোলন থেকে তাদের সরে আসার উপায় নেই।
এদিকে আজ বিকেলে ঢাকায় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের কড়া সমালোচনা করে তাদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাবার আহবান জানিয়েছেন। শিক্ষকদের দাবি বিবেচনা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় আশ্বস্ত করেছেন। বিবিসি বাংলা।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *