Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

সত্য গোপন ও দীন বিক্রিই আলেমদেরকে নিকৃষ্ট করে

Published

on

Hossain Mohammad Salimহোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
আহলে কেতাব ও মোশরেকদের মধ্যে যারা কাফের (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) তাদের বেলায় আল্লাহ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন “উলাইকাহুম শাররুল বারিয়্যাহ” অর্থাৎ তারাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্টতম। (সুরা বাইয়্যেনাহ ৬)।
এই একই পরিভাষা আল্লাহর রসুল ব্যবহার করেছেন আখেরি যুগের আলেমদের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ওলামাউহুম শাররুন মান তাহতা আদীহিম সামায়ী অর্থ ওলামাগণ হবে আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব (আলী রা. থেকে বায়হাকী, মেশকাত)। যারা কুফরি ও শেরক করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ যে শব্দটি ব্যবহার করলেন সেই শব্দটি রসুলাল্লাহ আলেমদের বেলায় ব্যবহার করলেন, কত মারাত্মক বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারা এত নিকৃষ্ট? এই কোন আলেম?
এই আলেম হচ্ছে তারা যারা মানবসমাজে ফেতনা (অশান্তি) সৃষ্টি করে যে ফেতনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সকল নবী-রসুল এসেছেন, যে ফেতনাকে নির্মূল করতেই আল্লাহ তাদের মাধ্যমে যুগে যুগে সত্যদীন বা জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন। যে আলেমরা এই জীবনব্যবস্থাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তারাই সমাজে ফেতনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী, যাবতীয় অশান্তির মূল গোড়া তারা। এই প্রতিবন্ধকতা তারা কীভাবে সৃষ্টি করছে তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
আল্লাহ সুরা বাকারার ১৭৪ নম্বর আয়াতে বলছেন, “আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন যারা তা (১) গোপন করে এবং (২) এর বিনিময়ে পার্থিব মূল্য হাসিল করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া কিছুই পুরে না।
এটা সাধারণ জ্ঞান যে, সত্য গোপন করাই হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা, সত্যই হচ্ছে শান্তির উৎস। কুফর শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে গোপন করা, ঢেকে রাখা। এক শ্রেণির আলেম মানুষকে সত্য জানতে দিচ্ছেন না, কুফর করছেন, ফলে মিথ্যা সংসারকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর মিথ্যার পরিণাম হচ্ছে ফেতনা তথা শোষণ, রক্তপাত, অবিচার ও দাঙ্গা হাঙ্গামা। আলেম সাহেবরা কী গুরুত্বপূর্ণ সত্য গোপন করেছেন? সেটা হচ্ছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে মো’মেন ও কাফের কাকে বলে সেটাই গোপন করেছেন এবং আল্লাহর দেওয়া সংজ্ঞার পরিবর্তে ভিন্ন সংজ্ঞা উদ্ভব করে জাতিকে পথভ্রষ্টতার মধ্যে নিমজ্জিত করে রেখেছেন। আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর হুকুম দিয়ে হুকুম (শাসন, বিচার-ফায়সালা) করে না তারা কাফের, জালেম, ফাসেক (সুরা মায়েদা ৪৪, ৪৫, ৪৭)।
জাতীয় জীবনে আল্লাহর বিধানকে জাতিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমাদের তৈরি করা বিধানকে গ্রহণ করে নিয়ে, আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে ইলাহ’র (হুকুমদাতা) আসন প্রদান করে মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠী যে আসলে মোমেন নেই, আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা কাফেরে পরিণত হয়েছে এই সত্যটি আলেম সাহেবরা গোপন রাখেন। ফলে মানুষ বাস্তবে কাফের হয়েও নিজেদেরকে মো’মেনই মনে করতে থাকে এবং জান্নাতের আশায় আমল করে যায়। তারা এটাও বলেন না যে, আল্লাহ বলেছেন, মোমেন হচ্ছে তারাই যারা আল্লাহ ও রসুলের উপর ঈমান আনে (তওহীদ), তাতে কোনো সন্দেহ করে না এবং জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে আল্লাহর রাস্তায় (মানবতার মুক্তির জন্য) সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ। (সুরা হুজুরাত ১৫)
এই আলেমগণ সর্বনিকৃষ্ট জীব কারণ তারা ধর্মের ধ্বজাধারী হয়েও মানুষকে সত্য মিথ্যার জ্ঞান দিচ্ছে না। মুসলিম দাবিদার এই জনগোষ্ঠী যে মো’মেন না, তারা যে উম্মতে মোহাম্মদী না, তারা যে জান্নাতের পথ সেরাতুল মোস্তাকীম থেকে সরে গেছে এটা বুঝতে দিচ্ছে না। কেন বুঝতে দিচ্ছে না? কারণ তাদের ব্যক্তিস্বার্থ। একই আয়াতে সেটাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে এর বিনিময়ে তারা তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে। আলেমরা বলছেন, আমদেরকে টাকা দাও, আমি তোমাদের মিলাদ পড়িয়ে দেব, নামাজ পড়িয়ে দেব, জানাজা পড়িয়ে দেব, কোরান খতম দিয়ে দেব, ওয়াজ শোনাবো। এগুলোই নেক আমল, এগুলোই তোমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। যারা নেক আমল করবে তাদেরকে আগে মো’মেন হতে হবে আর এই জাতি তো মো’মেনই নয়, সুতরাং মোমেন না হওয়া পর্যন্ত কোনো আমল দিয়েই তারা জান্নাতে যেতে পারবে না এই কথাটি তাদেরকে জানতে দিচ্ছে না। এই প্রতারণার ফলে মানুষের দুনিয়ার জীবন যেমন অশান্তিময় হয়ে গেছে, তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের আখেরাত। মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত যারা ধ্বংস করে দিচ্ছেন তারা নিঃসন্দেহে আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব পদবাচ্য হওয়ারই যোগ্য। লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *