Connect with us

কুড়িগ্রাম

ঐতিহাসিক ‌”বড়াইবাড়ী দিবস” আগামীকাল

Published

on

Rowmari (Kurigram) Photos 17-04-16শাহাদত হোসেন, রৌমারী, কুড়িগ্রাম: আগামীকাল ১৮ এপ্রিল, ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী দিবস। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্ত সংঘর্ষের ১৫তম বর্ষপূর্তি । ২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বড়াইবাড়ী গ্রামে ঢুকে নারকীয় তান্ডব চালায়। অকুতোভয় বিডিআর ও গ্রামবাসীদের মিলিত প্রতিরোধে পর্যদস্তু হয় আগ্রাসণকারী বিএসএফ। নিহত হয় বাংলাদেশের তিন বীর বিডিআর জোয়ান। ভারতীয় পক্ষে নিহত হয় ১৬ বিএসএফ সদস্য। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটি পালিত হয় ‘বড়াইবাড়ী দিবস’ হিসেবে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে রৌমারীতে ব্যাপক কর্মসুচী হাতে নেয়া হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, বড়াইবাড়ী গ্রামে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে আলোচনা সভা ও মিলাম মাহফিল। রৌমারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক,সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো.রুহুল আমিন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী,রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভার:) শঙ্কর কুমার বিশ্বাস,ওসি এ বি এম সাজেদুল ইসলাম, বিজিবি রৌমারী কোম্পানী কমান্ডার, বড়াইবাড়ী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার শাহজাহান প্রমূখ।
২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোর রাতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ বাংলাদেশী সীমান্তে অনধিকার প্রবেশ করে বড়াইবাড়ী গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল বিডিআর-জনতা। আর সেই প্রতিরোধে বিএসএফ এর ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা। শহীদ হয়েছিল ৩৩ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের সিপাহী আঃ কাদের। এছাড়া আহত হয় বিডিআর এর হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ন্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহি হাবিবুর রহমান ও সিপাহি জাহিদরু নবী । বিডিআর গ্রামবাসীর পাল্টা আত্র“মনে বিএসএফ’র ১৬ জোয়ান নিহত হয়। বিএসএফ এর তান্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ী গ্রামের ৮৯ টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে মোট ক্ষতির পরিমান ছিল ৭২ লাখ টাকা। এ ঘটনার ১২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সীমান্তে শান্তি ফিরে আসেনি। কাটেনি সীমান্ত আতংক। গ্রামের মানুষ এখনও দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আতকে উঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন। সরকারি আশ্বাস পুরন হয়নি। দেয়া হয়নি কড়া নিরাপত্তা, যোগাযোগ সুবিধাসহ নিরাপদ আবাসন হয়নি অনেকেরই। রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই,নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই পোড়া ভিটায় পোড়া টিনের চালের নিচে এবং ৮ টি তাবুতেই কাটছে অনেকের দুর্বিসহ জীবন।
কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে রৌমারী উপজেলা শহর ৪৫ কিঃমিঃ দূরে। তাও আবার ব্রম্মপূত্র নদ দ্বারা
বিচ্ছিন্ন। রৌমারী উপজেলা সদর থেকে দক্ষিন পূর্ব দিকে ১০ কিঃমিঃ দুরে বড়াইবাড়ী গ্রাম । ভারতের আসাম সীমান্তের ২২৬ একর জমি নিয়ে বড়াইবাড়ী গ্রাম যার আন্তর্জাতিক পিলার নম্বর ১০৬৭- ৪ঝ। ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বড়াইবাড়ী বিওপি তে ডিউটিতে ছিলেন মাত্র এগারোজন বিডিআর সদস্য তারা হলেন , হাবিলদার নজরুল ইসলাম, নায়েক সুবাদার ডি এম আব্দুল্লাহ, ল্যান্স নায়েক ফজলুল হক, ল্যাঃ নায়েক ওয়াহিদ, সিপাহি মোজাম্মেল হোসেন , ইদ্রিস আলী, আঃ হামিদ, লিটন মিয়া বদরুজ্জামান, ইসাহক, নায়েক এ এফ ্এম জালাল উদ্দিন এবং আদেশ দেন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ সায়রুজ্জামান পি এস সি। এর মধ্যে রাতে পালা করে চার জন ডিউটি দেন। ভোরে পৌনে ৪ টায় আক্িষ্কক ভাবে গ্রামের তরুন মিনহাজ উদ্দিন বিউপিতে খবর দিযে আসে কাঁটাতারের বেড়ার পূর্ব গেট দিয়ে বিএসএফ’র ৪ শতাধিক সদস্য ধান ক্ষেত দিয়ে ঢুকে পড়েছে বড়াইবাড়ী গ্রামে। বিডিআর বিষয়টি জানতে পেরে ৪টি মেশিনগান দিয়ে একযোগে তাদের উপর গুলিবর্ষন করে। আকর্ষিক এ আক্রমনে বিচলিত হয়ে পালাতে শুরু করে বিএসএফ। এ সময় গোলাগুলিতে শাহাদৎ বরণ করেন বিডিআর এর ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান এবং ভারতীয় পক্ষের ১৬ জন বিএসএফ নিহত হয় এবং দু’জন যুদ্দবন্দীকে আটক করে। এরপর ২ দিন লাগাতার ভাবে সংঘর্ষ চলে উভয় পক্ষের মধ্যে। বিডিআর এর পক্ষে গ্রামবাসী যোগ দেয়। এতে নিহত হয় বিডিআর এর সিপাহী মাহফুজার রহমান ও আঃ কাদের । এ সময় বিএসএফয়ের গুলিতে আহত গ্রামবাসীরা হলেন মোস্তফা মুন্সি (৪০), সাইফুন (৩২), মোখলেজা (৮)নার্গিস (১৮), তমিরন বেওয়া (৪৮), শেখসাদী(৪), বিলকিস খাতুন(১২), মকবুল হোসেন(৬০), ছমিরন নেছা(৫৫) ।
আজ রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, রৌমারী বাজার ও রাজিবপুর কর্ত্তিমারী হতে দুটি সড়ক বড়াইবাড়ী গ্রাম যাওয়ার রাস্তাাগুলো মারাত্মক ভাঙ্গাচোরা। গাড়ী ঘোড়া দুরের কথা, পায়ে হেঁটে যাওয়া দায়। তার উপর কাশিয়াবাড়ী ও মাদার টিলা ব্রিজ দুটি ভেঙ্গে গেলেও তা নির্মাণ হয়নি। এছাড়া ধরনী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় বড়াইবাড়ী গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা নাজুক যে, দেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো অবরুদ্ধ এলাকায় পরিণত হয়েছে। জিঞ্জিরাম, পাটাধোয়া ও কালো নদী এবং এর দুটি শাখা নদীতে ৫টি বাঁশের স্যাকো পেড়িয়ে যেতে হয় সীমান্তবর্তী বড়াইবাড়ী গ্রামে। আগে এ গ্রামে ৩৫০টি পরিবার বসবাস করত। সংঘর্ষের পর কিছু পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে ২১৮ টি পরিবার ওই গ্রামে বসবাস করছে। কিন্তু তাদের প্রতি মুহুর্তে কাটে আতংক আর উৎকন্ঠার মধ্যে। সরকার, রেড ক্রিসেন্ট ও এনজিও’র দেয়া সহায়তা নিয়ে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে এসব পরিবার। এখনো ৮ টি পরিবার তাবুতে বসবাস করছে। গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আঃ ছালাম, দিন মজুর রইচ উদ্দিন(৬৫), প্রাক্তন মেম্বার আঃ কাদের(৫০), মজিবর রহমান (৪৭) জানান তাদের দুর্বিসহ জীবনের কথা। আগে গ্রামে সুখ ছিল, শান্তি ছিল, সুখে-দুখে দুু পাড়ের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বিএসএফ তাদের সহযোগিতা করত। যুদ্ধের পর সব যেন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল। এখন সীমান্ত ঘেষা জমিগুলোতে আবাদ করতে, যেতে হয় জীবন বাজিরেখে। আর কদিন পরে ধান পাকবে। কৃষকদের মনে ভয় ধান কাটতে পারবো তো ? তাদের দাবী সরকারী আশ্বাসের বাস্তবায়ন ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করন এবং বড়াইবাড়ী দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায়।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *