Connect with us

দেশজুড়ে

সুনীল গোমেজ হত্যাকান্ডের তদন্তে তৎপরতা নেই পুলিশের

Published

on

Baraigram Sunil's Shop and Black Flagবড়াইগ্রাম(নাটোর)প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করার বিশ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। প্রথম এক সপ্তাহ পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়লেও বর্তমানে তা যেন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রমে অগ্রগতি ও একই সাথে তৎপরতা না থাকায় অনেকটা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে নিহত সুনীলের পরিবার ও স্থানীয় খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে উপজেলার ১২টি খ্রিষ্টান পল্লীর চার সহস্রাধিক বাড়িতে উড়ছে কালো পতাকা।
গত ৫ জুন দুপুর পৌনে বারোটার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সুনীল গোমেজকে (৬৫) তার মুদী দোকানের মধ্যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীর বাসিন্দারা খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়ক অবরোধ সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। তবে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ সুনীলের বাড়ির ভাড়াটিয়া ট্রাক ড্রাইভার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে সবুজ (৩৫) ও মনোয়ারা খাতুন ওরফে মনি (২৫) কে আটক করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদেরকে বর্তমানে নাটোর কারা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সুনীল হত্যা মামলার বাদী তার মেয়ে স্বপ্না গোমেজ জানান, তার বাবাকে হত্যা করার পর পুলিশ প্রথম ৫/৭দিন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে বেশ তৎপর ছিলো। তবে এই তৎপরতা এখন একেবারে নেই বললেই চলে। তিনি আরও বলেন, তার বাবা সুনীল গোমেজ হত্যার ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেন সিকদার, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েত আহমেদ পলকসহ সরকারদলীয় ৪ জন এমপি, রাজশাহী রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মো. মাসুদুর রহমান ভুঁইয়া ও প্রশাসনের বিভিন্নস্তরের অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ তাদের বাড়িতে আসেন এবং এই হত্যাকান্ডের বিচার যেকোন ভাবেই হোক করা হবে বলে প্রতিশ্রæতি দেন। অথচ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই হত্যাকান্ডের কোন ক্লু এখন পর্যন্ত বের করতে পারেননি। এ ব্যাপারে সুনীলের পরিবারের সদস্যরা ও প্রতিবেশীরা জানায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওসি আব্দুল হাই তালুকদার মামলার তদন্তে ঘটনাস্থলে মাত্র তিনদিন আসার পর উনাকে আর দেখা যায়নি। এছাড়া অন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যদের মামলার তদন্তে এলাকায় আসতে দেখেননি। ফলে এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন বাদী ও স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে ওসি আব্দুল হাই তালুকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে তার নিজস্ব গতিতে। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম প্রকাশ্যে সকলকে দেখিয়ে করতে হবে তা নয়। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব শীঘ্রই আসল খুনীদের পরিচয় সকলেই জানতে পারবেন।
বনপাড়া খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের নেতা শেখর কোড়াইয়া জানান, সুনীল হত্যার বিচারের দাবিতে বনপাড়া খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন অব্যহত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। গত ১২ জুন নাটোর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করার পর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আরও বিভিন্ন কর্মসূচী দেয়া হবে।
এদিকে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে সরেজমিনে সুনীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করা রয়েছে ও পাশে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি লেখা সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গানো রয়েছে। এর আগে বনপাড়া, বাহিমালী, ভবানীপুর, শ্রীখন্ডি, কালিকাপুর খ্রিষ্টান পল্লীতে ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়িতে কালো পতাকা কোনটা অর্ধনমিত আবার কোনটা পূর্ণনমিত উত্তোলন করা রয়েছে। কালিকপুরের ষাটর্দ্ধো প্রবীণ ব্যাক্তি ও ক্ষুদ্র খ্রিষ্ট মন্ডলীর সভাপতি ডা. পল সুবল কস্তা জানান, তাদের মতো বয়স্করা সবচেয়ে বেশী আতঙ্কে রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, টার্গেট কিলিং এর জন্য কিলাররা বয়স্কদেরকেই বেছে নিচ্ছেন যা তারা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
বনপাড়া খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীর সহ-সভাপতি বেনেডিক্ট গোমেজ বলেন, এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলের খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠির মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
নাটোরের অতিরিক্তি পুলিশ আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। পুলিশ ধর্মপল্লীর সবখানে প্রয়োজনীয় নজর রাখছে। সুনীল হত্যার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য যদি কারো কাছে থাকে তবে তা গোপনে পুলিশকে দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানান তিনি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *