জাতীয়
আতঙ্কিত হবেন না, অমুসলিমদের হত্যা করতে এসেছি
অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের এই অভিযানে ছয় হামলাকারী নিহত হলেও হতাহত হননি অভিযানকারীদের কেউই; তিন বিদেশিসহ ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার ও গলা কাটা অবস্থায় ২০ জনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া হামলাকারীদের একজনকে আটকের কথাও জানায় তারা।
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ নামের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের হাতে নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, সাত জন জাপানি এবং একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি; যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই রাতে অস্ত্রধারীরা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি তুলে রেস্তোরাঁটিতে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সবাইকে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করতে বলে হামলাকারীরা; যারা পারেননি তাদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। এমনকি তাদেরকে রাতের খাবারও দেয়া হয়নি।
দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো ঢাকায় এই সন্ত্রাসী হামলার খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে। ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে’ হামলার ঘটনায় যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তারা, সেই রাতের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
রেস্তোরাঁয় থাকা বাংলাদেশি এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’ জানিয়েছে, “সন্ত্রাসীরা ওই সময় তাকে বলেছিল, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আমরা শুধু অমুসলিমদের হত্যা করতে এখানে এসেছি।’
হামলার ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই হামলার মাধ্যমে এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ এখন সন্ত্রাসীদের জন্য একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’
রেজাউল করিম নামের এক বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘হামলাকারীরা উপস্থিত সবাইকে কোরআন তেলাওয়াত করতে বলেছিলেন, যারা কোরআন তেলাওয়াত করতে পেরেছেন কেবল তারাই তাদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন।’
রেজাউল করিমের ছেলে হাসনাত ওই রাতে সেই রেস্তোরাঁয় ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রেজাউল করিম ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে’ আরও জানান, ‘যারা সে সময় কোরআন তেলাওয়াত করতে পেরেছিলেন শুধু তাদেরই রাতে খাবার দেয়া হয়েছিল এবং বাকি সবার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।’
‘হলি আর্টিজান বেকারিতে’ জিম্মি সঙ্কট শুরুর ঘণ্টাপাঁচেকের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার ‘দায় স্বীকার করেছে’ বলে খবর দেয় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ খবরটি প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও।
আইএসের কথিত সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’-এর বরাত দিয়ে ওই খবরে বলা হয়, ‘এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৪০ জন, যাদের কয়েকজন বিদেশি।’
বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’ আরও জানিয়েছে, ‘এই হামলার মাধ্যমে এটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে আমরা উচ্চমাত্রার সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছি।’
গুলশানের ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে’ রুদ্ধশ্বাস কমান্ডো অভিযানে জিম্মি সঙ্কটের অবসান হয়েছে শনিবার সকালেই; তবু এখনও হতবিহ্বল গোটা জাতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দু’দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। শোক চলছে দেশজুড়ে; স্বজনদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।
শনিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক বাহিনীর তরফে গুলশান হামলায় ২০ জন নিহতের কথা জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে হামলার পরপরই জিম্মিদের উদ্ধারে গিয়ে তাদের ছোড়া বোমার স্প্লিন্টারে মারা যান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দীন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্যসহ আরও ৪০ জন। ছয় হামলাকারীসহ সব মিলিয়ে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ জনে।