Connect with us

বিবিধ

জঙ্গিদের যোগাযোগের মাধ্যম এখন কমিউনিকেশন অ্যাপ ও স্যাটেলাইট ফোন

Published

on

কমিউনিকেশন অ্যাপ ও স্যাটেলাইট ফোন - Communication App and satellite phones

প্রযু্ক্তি ডেস্ক: অ্যাপসমোবাইলফোন, ল্যান্ডফোন, ই-মেইলে নজরদারি করা যায় বলে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহার করছে কমিউনিকেশন অ্যাপ ও স্যাটেলাইট ফোন। কমিউনিকেশন অ্যাপ তথা ওটিটি (ওভার দ্য টপ) সেবা হিসেবে দেশে হালে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে স্কাইপ, ভাইবার, ট্যাঙ্গো ও হ্যাংআউট সেবা। পাশাপাশি রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে এসব ওটিটি সেবার মাধ্যমে ভয়েস এবং ভিডিও কল করা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সেবা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বেশি পছন্দ হওয়ার কারণ হলো এগুলোতে সরকারের কোনও নজরদারি নেই।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে মোবাইলফোনে ভয়েসসহ অন্যান্য সেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে ১০০ গিগার বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয়। স্কাইপ, ভাইবার, ট্যাঙ্গো ও হ্যাংআউটসহ অন্যান্য ও‌‌‌টিটিতে ব্যবহার হচ্ছে ২০-২৫ গিগা ব্যান্ডউইথ। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে যা পরিমাণ ছিল ১০ থেকে ১৫ গিগা। দুই বছরের ব্যবধানে যা বেড়েছে, তা প্রায় দ্বিগুণ বলে জানালেন প্রযুক্তি বিশ্লেষক বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর্স গ্রুপ (বিডিনগ) এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির।
সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলাপের সময় আমার মনে হয়েছে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ওটিটি সেবা ব্যবহার করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা আলাপকালে আমার কাছে এসব প্রযুক্তির সুবিধা, অসুবিধা, মনিটর করার বিষয়ে আলাপ করতেন। এতে আমার ধারণা হয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ওটিটি সেবা ব্যবহার করে থাকতে পারে। তার মতে, ওটিটি সহজে ব্যবহার করা যায়। কেবল ইনস্টল করে নিলেই হয়। এগুলো পরিবর্তনও করা যায় দ্রুত। ওটিটি অ্যাপ ব্যবহারের মূল কারণই হলো, ‘আমার কমিউনিকেশন কেউ যেন দেখতে না পায়।’
সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করতে পারে উল্লেখ করে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, স্যাটেলাইট ফোন যেকারও পক্ষে ট্র্যাক করা সম্ভব নয়। তবে যারা স্যাটেলাইট ফোন প্রোভাইডার তারা চাইলে ট্র্যাক কের বের করতে পারে কে, কোথায় কী কাজে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছে। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্র্যাক করতে না পারার কারণেই স্যাটেলাইট ফোনের জনপ্রিয়তা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে বেশি। তিনি গুলশান হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, শুনেছি ও জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে। তার মানে জঙ্গিগোষ্ঠী রেডিও কমিউনিকেশনও ব্যবহার করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সতর্ক থাকলে রেডিও ট্র্যাক করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিটিগুলো এনক্রিপটেড ফরম্যাটের হওয়ায় বেশিরভাগের মাধ্যমে কথা বলা এবং ভিডিও কলের কোনও রেকর্ড থাকে না। বেশির ভাগ ওটিটি সেবায় কোনও রেকর্ড থাকে না। ফলে কোনও ধরনের সন্দেহজনক কথাবার্তা বা ভিডিও বার্তা উদ্ধার করা কঠিন। যারা অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকে প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চ ধারণা রাখে। এই সুযোগে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা দেশে-বিদেশে যোগাযোগ করছে বলে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে। ওই গোয়েন্দা সংস্থা এরই মধ্যে কিছু আলামতও উদ্ধার করেছে যা প্রমাণ করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা এসব মাধ্যম ব্যবহার করছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বেশ আগেই তারা বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে দেশে সংঘটিত কয়েকটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে তারা অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে উচ্চপ্রযুক্তি (ওটিটি সেবা) ব্যবহার করছে। এ রকম কয়েকটি ঘটনার সূত্র বিশ্লেষণ করে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তাদের নিরাপদ যোগাযোগে কমিউনিকেশন অ্যাপ ব্যবহার করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে এ দেশের জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীরা যোগাযোগ রক্ষা করছে এসব মাধ্যমে। দেশের ভেতরে তাদের অপতৎপরতা, কার্যক্রম বিস্তার, সদস্য সংগ্রহ, অর্থায়ন প্রভৃতি বিষয় স্কাইপে, ভাইবার, ট্যাঙ্গো ও হ্যাং আউট সেবা ব্যবহার করে তারা নির্দেশ দিচ্ছে এবং সেই মতে কাজ হচ্ছে।
দেশের প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, মাত্র ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় একটি অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব। ‘অ্যাপ স্টোরে’ না দিয়েই এই অ্যাপ নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে ডিজিটাল ডিভাইসে ইন্সটল করেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গত বছর কয়েকটি ওটিটি সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি সরকার ভাইবার ও ট্যাঙ্গো সেবা বন্ধ করে দেয়। এরপরে বন্ধ করা হয় হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন ও মাই পিপল।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *