Connect with us

চট্রগ্রাম

”দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতার বিকল্প নেই”

Published

on

ctg DC Office Programচট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ বিষয়ে মসজিদের ইমাম-খতিবগণের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

চট্টগ্রাম অফিস: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তুলনায় বাংলাদেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক কম হয়েছে। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের উত্থান আমাদের দেশের মানুষের মোটেই কাম্য নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, ইদানিংকালে এক শ্রেণির বিপথগামী ছেলেরা এ কাজে ঝুঁকিয়ে পড়েছে এবং তরুণ সামাজের কাছে ইসলাম বিরোধী অপব্যাখ্যা বা বক্তব্য দিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোসহ মানুষ হত্যা করে বেহেস্তে যাওয়ায় ফতোয়া দিচ্ছে। দেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ নিরসনে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যে মসজিদের খতিব ও ইমামদের নিয়ে সমাবেশ অন্যতম। পরবর্তীতে জেলা, উপজেলা ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশসহ সময়োপযোগী কর্মসূচি পালন করা হবে। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ রোধ করা সম্ভব নয়। মানুষ যদি সচেতন হয় তাহলে জঙ্গিরা এদেশে বিস্তার লাভ করতে পারবে না। তাই দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সর্বদা তৎপর রয়েছে। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ বিষয়ে মসজিদের ইমাম-খতিবগণের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের আয় সাড়ে ৬’শ মার্কিন ডলার থেকে বর্তমানে ১৪’শ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশের অন্যান্য যে সূচক সেগুলোও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতে-বাংলাদেশ আর দরিদ্র রাষ্ট্র নেই। নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমান সরকারের ঘোষণা অনুযাযী দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২১ সালের আগেই এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত রাষ্ট্র। এ সকল ঘোষণা ও উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছূ রাষ্ট্র বা দেশ আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেছে। এই ষড়যন্ত্রের একটি অংশ আমাদের দেশকে জঙ্গি ও মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই জন্য নিজের ও দেশের স্বার্থে আমাদের সবাইকে জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, একটি মার্কেটে বা গুরুত্বপূর্ণস্থানে যখন বোমা হামলা চালানো হয় তখন নিরীহ লোক বেশি মারা যায়। এমনকি যারা কোন রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয় তারাই বেশি হামলার শিকার হয়। কোরআন-হাদীসের কোথাও নেই যে জঙ্গি হামলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা। এটা ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড। তাই নামাজের সময় অন্যান্য বক্তব্যের পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিরোধী বক্তব্য রাখার জন্য মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানান জেলা প্রশাসক।
মেজবাহ উদ্দিন আরো বলেন, জঙ্গিদের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এক শ্রেণির মৌলবাদী সংগঠন উঠতি বয়সী তরুণদের মানুষ হত্যার রাজনীতি শিখিয়ে বেহেস্তে যাওয়ার ফতোয়া দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করে। বেহেস্তে যাওয়া এত সহজ নয়। মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য শিখিয়ে মানুষ মারার অপরাজনীতি থেকে ফিরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় বাংলার মাটিতে কোন জঙ্গির ঠাঁই হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করবে।
তিনি বলেন, পিস টিভি সম্পৃক্ত যে কোন তথ্য আমলে নেয়া হবে। পিস টিভিতে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, চট্টগ্রামের যারা আলোচক ছিলেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সাথে পিস ক্লাব পিস স্কুল কলেজ এবং ‘পিস’ সংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে উপর মহলে পাঠানো হবে। তিনি (জেলা প্রশাসক) নিজেও পিস টিভি দেখতেন না, এর আলোচনা ও প্রচারিত বিষয়গুলো বিভ্রান্তিকর মনে হতো।
কিছু কিছু মসজিদে জঙ্গিদের আনাগোনা আছে উলে­খ করে তিনি আরো বলেন, মসজিদের ইমাম-খতিবদের নিজ নিজ এলাকার জঙ্গিদের খোঁজ খবর নিয়ে সন্দেহজনক কিছু থাকলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করুন। চট্টগ্রাম জেলা ও নগরীতে ৯০১০টি বিভিন্ন ধরনের মসজিদ রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে প্রত্যেক মসজিদে অভিন্ন খুৎবা পৌঁছে দেয়া হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসারগণ এগুলো নিয়মিত মনিটরিং করবেন।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মসিউদ্দৌলা রেজা বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ১৬টি থানার প্রত্যেকটি এলাকায় পুলিশ সর্তক অবস্থায় আছে। মসজিদ কেন্দ্রিক জঙ্গি তৎপরতার উপর নজরদারি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুুলিশের সহকারী কমিশনার(ইন্টেলিজেন্স) কাজীমুর রশিদ বলেন, নগরীতে ৯ হাজার ১০টি ছোট বড় মসজিদ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে পুলিশের নজরদারি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য আছে মুরাদপুরের একটি মসজিদ ও সিডিএ জামে মসজিদে জঙ্গিদের আনাগোনা আছে এবং আন্দরকিল­া শাহী জামে মসজিদেও জঙ্গিরা হাজার হাজার মুসল­ীদের মাঝে আসা যাওয়া কর, উলে­খ করেন তিনি।
তিনি এসব মসজিদের জঙ্গিদের কোন তথ্য পেলে ০১৭১৩-৩৭৩২৪৬ নাম্বারে নাম পরিচয় না বলে শুধু তথ্যটা দেওয়ার অনুরোধ করেন।
মতবিনিময় সভায় আন্দরকিল­া শাহী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানী বলেন, ইসলাম মৌলিকভাবে সন্ত্রাসীদের বিরোধীতা করছে, যারা মসজিদে নিরিহ মানুষদের নামাযরত অবস্থায় হত্যা করে তারা কিসের মুসলিম । ইসলামের সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক আবুল হায়াত মুহাম্মদ তারেক বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বাইতুল মোকাররম মসজিদের খুৎবার মত চট্টগ্রামের সকল মসজিদে খুৎবা পৌঁছে দেয়া হবে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি খুৎবা মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। রোববার থেকে প্রতিদিন একটি দুটি উপজেলার কিছু কিছু মসজিদে মনিটরিং করা হবে। মতনিনিময় সভায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বারোপ করেন বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড.অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মসিউদ্দৌলা রেজা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক আবুল হায়াত মুহাম্মদ তারেক, র‌্যাবের মেজর মো. জাহাঙ্গীর, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির উপ-পরিচালক বোরহান উদ্দিন মো. আবু আহসান, আন্দরকিল­া শাহী জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী, জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম মাওলানা নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী, সহকারী পুলিশ কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) কাজীমুর রশিদ এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদের খতিব ও ইমামগণ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *