Connect with us

দেশজুড়ে

যেভাবে জঙ্গি হয়ে উঠে পীরগাছার রায়হান

Published

on

Rayhan Kabir 2রংপুর প্রতিনিধি: ঢাকার কল্যাণপুরে যৌথ অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানার হাত ধরেই জঙ্গি হয়ে ওঠা রায়হানুল কবির নামে এক জঙ্গিও নিহত হয়েছে। আর এই জঙ্গির মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারি ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের শাহাজাহান কবিরের ছেলে রায়হানুল কবির। সে মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করেছে। পুলিশ তার নাম রায়হানুল কবির বললেও এলাকাবাসি তাকে শাহীনুল ইসলাম নামেই বেশি পরিচিত।
মাদরাসার সুপার গিয়াস উদ্দিন আশরাফী জানান, রায়হানুল কবির মাদরাসা থেকে ২০১৩ সালে রায়হান এ গ্রেড পেয়ে দাখিল পাশ করে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, জেএমবির অন্যতম নেতা বাংলা ভাইয়ের সহযোগিতায় নিহত রায়হানুল কবিরের ওই এলাকায় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই মসজিদের পাশেই জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানার বাড়ি। তার বাড়ি ঘেষেই রায়হানুল কবিরের বাড়ি। মাসুদ রানার সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো। একারণেই রায়হানুলের মৃত্যুর খবর শুনে স্থানীয়রা ধারণা করছেন তার জঙ্গি হয়ে উঠার জন্য জেএমবি কমান্ডার মাসুদ রানাই দায়ী।
মাসুদ রানা রংপুরে চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও, মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা ও বাহাই নেতা রুহুল আমিনকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি এবং জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার। বর্তমানে সে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। এছাড়াও ওই তিন মামলার অপর এক আসামি জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীর বাড়িও একই এলাকায়।
এদিকে, নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হবার পর থেকে ওই বাড়িতে পুলিশি পাহারা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত জঙ্গি রায়হানুল কবিরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা রাহেলা বেগম শয্যাশায়ী হয়ে বিছানাায় পড়ে রয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি।
বাড়িয়ে রায়হানুল কবিরের বাবা শাজাহান কবিরকে দেখা যায় নি। পুলিশ তাকে পলাতক বললেও বাড়ির পাশের আমিনা বেগম নামে একজন বলেন, শাজাহান অসুস্থ জনিতকারণে দুই দিন আগে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে রায়হানুল কবিরের চাচা আব্দুর রউফ জানান, ছোট বয়স থেকেই নম্র স্বভাবের রায়হান পড়ালেখা করতো স্থানীয় দামুরচাকলা দেওয়ান সালেহ আহম্মেদ দাখিল মাদরাসায়। সেখান থেকে দাখিল পাশ করার পর দেউতি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয় সে। বেশিদিন কলেজে পড়ালেখা করেনি রায়হান। প্রায় দুই বছর আগে পোশাক কারখানায় কাজ করার কথা বলে ঢাকা চলে যায়। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতো এবং যোগাযোগ রাখতো।
তিনি আরো জানান, সর্বশেষ গত রমজানের দু’দিন আগে বাড়িতে আসার পর পহেলা রোজার দিন ঢাকা যাবার কথা বলে চলে যায় রায়হান। এরপর থেকে আর পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেনি রায়হানুল কবির।
সম্প্রতি ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে নিহতের তালিকায় রায়হানের নাম ও ছবি দেখে তারা নিশ্চত হন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রায়হান। বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে একটি তাঁত কারখানায় কাজ করেন। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।
এদিকে এলাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেএমবি’র রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানার বাড়ি ও নিহত জঙ্গি রায়হানুল কবিরের বাড়ি পাশাপাশি। মাসুদ রানা বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। এছাড়াও অপর এক জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীর বাড়িও একই এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, জেএমবির অন্যতম নেতা বাংলা ভাইয়ের সহযোগিতায় ওই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রায়হানুলের মৃত্যুর খবর শুনে স্থানীয়রা ধারণা করছেন তার জঙ্গি হয়ে উঠার কারণ হিসেবে জেএমবি কমান্ডার মাসুদ রানাই দায়ী।
ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাদের প্রধান জানান, প্রথমে ছবি দেখে মা রাহেলা বেগম পরিচয় নিশ্চিত না করলেও আমি যাওয়ার পর ওর মা পরিচয় নিশ্চিত করেছে। ওর পিতা পুলিশ দেখে পালিয়ে গেছে।
এদিকে পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, নিহত জঙ্গি রায়হানুল কবিরের বাড়ি পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *