Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

বিশ্বজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞের সব আয়োজন সম্পন্ন!

Published

on

third-world-war

রিয়াদুল হাসান
সারা পৃথিবীতে যেন একসঙ্গে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য রণসাজে সাজছে প্রতিটি পরাশক্তিধর রাষ্ট্র। প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমানায় মোতায়েন করছে দূর পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সাগরে মোতায়েন করছে নৌবহর। পরমাণুবোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, কেঁপে উঠছে ধরণী। প্রদর্শনী চলছে সামরিক শক্তিমত্তার, মানবজাতি ধ্বংসকারী মারণাস্ত্রের।
আপনি দু’ চার টাকার ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে খুব সামান্যই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু একটা আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা মারণাস্ত্র রপ্তানির মাধ্যমে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার উপার্জন সম্ভব। অস্ত্র ব্যবসার জন্য বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এ জন্য অস্ত্র-উৎপাদনকারী পরাশক্তিধর সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ ও অশান্তি বাধানো একান্ত দরকার হয়। তৃতীয় বিশ্বকে ঐ অর্থ ঋণ দিয়ে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়। এটা করতে গিয়ে কোন জাতি বা রাষ্ট্র ধ্বংস হলেও কিছু যায় আসে না ঐসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর। খনিজ সম্পদ কব্জা করতে শক্তি বা ক্ষমতা দরকার হয়। এসব নিয়েই গত কয়েক যুগ ধরে একের পর এক দেশ রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। বিশ্বের কেন্দ্রীয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাষ্ট্রগুলো তৈরি করেছে ন্যাটো যা দিয়ে সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিনিয়ত তারা চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে পৃথিবীতে ছয় কোটি মানুষ উদ্বাস্তু। সিরিয়া পরিস্থিতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যপ্রাচ্য লুণ্ঠনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। বিগত দুই শতাব্দীতে আফ্রিকা ও এশিয়ার মুসলিম বেল্টে এই উপনিবেশবাদী শক্তিগুলো কী পরিমাণ লুণ্ঠন ও গণহত্যা চালিয়েছে সে মর্মান্তিক ইতিহাসে নাই গেলাম, আমরা চলমান সময় নিয়েই কথা বলি। পরাশক্তিগুলো বিভিন্ন দেশে তাদের তাবেদার সরকার বসিয়ে রেখে নানা কৌশলে সেসব দেশের সম্পদ লুট করে যাচ্ছে। মানুষ এই শোষণের পরিণাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করে আরব বসন্তের সূচনা করেছিল। সেই আরব বসন্তও হয়েছিল পশ্চিমাদেরই রোডম্যাপ অনুসরণ করে। তিউনিশিয়ায় এক হতাশাগ্রস্ত যুবক নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান দাবানলের সূত্রপাত ঘটালো। বেন আলী পালিয়ে বাঁচলেন কিন্তু মরল হাজার হাজার মুসলমান।
তারপর আক্রান্ত হলো মিশর, সেই একই প্রক্রিয়া। পতন হলো হোসনে মোবারকের সুদীর্ঘ স্বৈরতন্ত্রের। এবারও প্রাণ গেল হাজার হাজার মানুষের। এরপর আক্রান্ত হলো লিবিয়া। পশুর মতো গুলি করে ছেলেমেয়েসহ মারা হলো প্রতাপশালী কর্নেল গাদ্দাফিকে। লিবিয়া আজ লন্ডভন্ড, সেখানে ত্রাসের রাজত্ব চলছে। একক কোনো সরকার নেই। লিবিয়াকে গোরস্তান বানাতে ব্যবহার করা হলো আমেরিকার পোষা জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদাকে।
সিরিয়ায় বাশার বিরোধী জোটকে প্রকাশ্যে অস্ত্র সরবরাহ করল ব্রিটেন। এই বিরোধীরা প্রকৃতপক্ষে আল কায়েদার নেতৃত্বে সংগঠিত জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীগুলোর জোট। এদেরই একটি অংশ আইএস তেল ও অস্ত্রে শক্তিশালী হয়ে, বিশ্বের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত তথাকথিত মুজাহিদদেরকে নিয়ে ইরাক সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে কথিত খিলাফাহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করল। মধ্যপ্রাচ্যে ঘাঁটি গাড়ার অভিসন্ধিতে বাশার সরকারকে মদদ দিল রাশিয়া আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোট। সিরিয়াকে কেন্দ্র করে যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয়ে যেতে পারে। বিদ্রোহীদের দখল করে নেওয়া আলেপ্পোসহ অন্যান্য শহরগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রমাগত হাজার হাজার বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সিরিয়া ও রুশ বাহিনী। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বহু নগরী, মরছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ, নারী, শিশু। ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও। আলেপ্পোতে বোমা হামলার কারণে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে দাঁড়াতে হবে বলে সোমবার (১১ অক্টোবর) ফরাসি এক টিভিতে মন্তব্য করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। এ মন্তব্যের পর সিরিয়া ইস্যুতে বিরোধের জের ধরে ফ্রান্স সফর স্থগিত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন। অর্থাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত।
বর্তমান পৃথিবীতে সপ্তম পরাশক্তি হিসাবে সৌদি আরবকে ধরা হয়। তারা আমেরিকার উৎপাদিত অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। দীর্ঘদিন থেকে সৌদিরা সেই অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে ইয়ামেনের মুসলিমদেরই বিরুদ্ধে। কিছুদিন আগেও সৌদিদের বিমান হামলায় একটি জানাজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত শতাধিক মুসলমান নিহত হয়, আহত হয় প্রায় সাড়ে চারশ মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে আরব জোটের দেশগুলো সাবেক রাষ্ট্রপতি আলি আবদুল্লাহ সালেহের অনুগত হুথি বাহিনীর সাথে নিয়মিতই লড়াই চালিয়ে আসছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৬ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছেন। বিদ্রোহীদের দমন করতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে গত বছরের মার্চ থেকে হামলা শুরু হয় ইয়েমেনের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে বিদ্রোহীদের পক্ষে রয়েছে ইরান। জঙ্গি সংগঠন আইএসও নিয়মিতভাবে আত্মঘাতি হামলা, গাড়ি বোমা হামলা ইত্যাদি চালিয়ে শত শত বেসামরিক লোক হত্যা করে চলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নী, ওয়াহাবী আরবদের একচ্ছত্র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছে শিয়া রাষ্ট্র ইরান। সিরিয়ার বাশার-আল আসাদের অন্যতম সমর্থক ইরান। ২০১১ সালে সিরীয় গৃহযুদ্ধের শুরু পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরান বাশার সরকারকে বিপুল পরিমাণে আর্থিক (শত শত মিলিয়ন ডলার) ও সামরিক সহায়তা (প্রশিক্ষণ, মিলিশিয়া বাহিনী, ড্রোন বিমান, গোয়েন্দা তথ্য) প্রদান করেছে। ইরানের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া বিদ্রোহীদের দখলকৃত এলাকাগুলোয় বিমানহামলা চালাচ্ছে। ওদিকে ইরানের সাথে ইসরাইলের দীর্ঘকাল থেকেই মুখোমুখি অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলকে হামলা করার জন্য যে অস্ত্র ও শক্তি দরকার, ইরান তা অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইরানের অন্যতম মিত্র লেবাননের কট্টরপন্থী শিয়া গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ। হেজবুল্লাহর কাছে ১০ হাজারের বেশি রকেট লঞ্চার রয়েছে। এর অধিকাংশই তাদের দিয়েছে ইরান। ইরান হেজবুল্লাহকে একাধারে ইসরাইল ও সিরিয়াতে ব্যবহার করছে।
ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল ও শহর দখল করে খিলাফত রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয় আইএস। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মতে, সংগঠনটিতে ২১ হাজার থেকে ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসকে দমনে ৩০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে হামলায় সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবসহ ১০টি আরব রাষ্ট্র রয়েছে। শিয়া-সুন্নির দ্বি-মুখী লড়াইয়ে বিপর্যস্ত ইরাকের শিয়া নিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নুর ই মালিকি তার সরকারি বাহিনী দিয়ে কোনোভাবেই জঙ্গিদের প্রতিরোধ করতে সমর্থ হচ্ছে না। ইরাক সীমানার অভ্যন্তরে গিয়ে আইএস-এর বিরুদ্ধে ইরানের হামলা চালানোর আর একটা কারণ ইরাকের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার। আবার তালেবানদেরকেও আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মদদ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে ইউক্রেনের কাছাকাছি ন্যাটো যুদ্ধ প্রস্তুতির মতো সৈন্য সমাবেশ ঘটাবার পর রাশিয়াও ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের কাছাকাছি স্মরণকালের ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ ও অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে। গত ৯ মে রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৭০ বছর পূর্তি পালন করে পশ্চিমাদের বয়কট করে। মস্কোর রেড স্কয়ারে ওইদিন এ যাবৎকালের বৃহত্তম সামরিক মহড়া চালায় রাশিয়া। গত বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয় এবং পশ্চিমারা ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান সৈন্য সমাবেশ করে। বোদ্ধামহল মনে করছেন, ইউক্রেন নিয়ে যদি পশ্চিমারা বেশি বাড়াবাড়ি করে, তবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু এখানেই হতে পারে।
২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা শপথ গ্রহণ করেই বলেছিলেন- ‘আমরাই থাকব বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র’। ওবামার শাসনের আট বছরের একেবারে প্রান্তিককালে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটিও হুমকির মুখে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের মধ্যপ্রাচ্যে ‘পোড়ামাটির নীতি’র খেসারত মার্কিনীদের কীভাবে পরিশোধ করতে হয়েছে তা যেভাবে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে, তেমনি ওবামাকে করতে হয়েছে নীতির পরিবর্তন। ওবামাও আট বছরের শাসনে নানা সংস্কার এবং আক্রমণাত্মক নীতি থেকে সরে এসেও শেষ রক্ষা করতে পারেন নি। এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, গণচীনের দ্বারা। এর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে অবস্থিত মার্কিনিরা মহাযুদ্ধকে তাদের মাটির বাইরে রাখতে সমর্থ হলেও এখন আর পারছে না, বোধ হয়।
বিশ্বের সামরিক শক্তি বিবেচনায় চীন তৃতীয় পরাশক্তি। চীনের সুপার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো (পাল্লা ১৫০০০ কিমি এর বেশি), যার সাথে পরমাণু বোমা সংযুক্ত করা যায়, তা আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ বড় বড় স্টেট এবং শহরগুলোয় আঘাত হানতেও সক্ষম। চীন তার আধিপত্যমূলক তৎপরতা সম্প্রসারিত করে চলেছে। দাবি করছে, দক্ষিণ চীন সাগরে তার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত দক্ষিণ চীন সাগরকে নিজস্ব এলাকার রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে যা, যুক্তরাষ্ট্র হতে দিতে পারে না। তাই আমেরিকা তার দ্বিতীয় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস আইসেনহাওয়ার ভূ-মধ্যসাগরে পাঠিয়েছে। এ পরিস্থিতিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারের মতে ‘চীনের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ প্রস্তুতি’।
দিন দিন পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা চীনকে শায়েস্তা করতে জল, স্থল ও আকাশপথে সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণের ছক কষছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্দেশ পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে যত দিন পরাস্ত করা না যায় তত দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একমেরু বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে দ্রুত শক্তিধর হয়ে ওঠা চীনকে ধুলায় মিশিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য আনতে ২০২৫ সালেই এই যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই যুদ্ধে চীনের পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণসহ যুদ্ধে জয়ী হতে এখন থেকেই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চীন সর্বশেষ যুদ্ধে জড়ায় ১৯৬২ সালে ভারতের সাথে তিব্বত নিয়ে, সে যুদ্ধে চীন তিব্বতের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ভারত এখনও তিব্বতের উপর চীনের কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের সাথে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের দ্বন্দ্বে কিছুটা হলেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে ভারত। সর্বশেষ এতে ইন্ধন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ চীন সাগরের পুরোটা একক মালিকানা দাবি করে চীন। কিন্তু চীনের এই একক মালিকানা নীতির বিরোধিতা করে ভিয়েতনাম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই প্রভৃতি রাষ্ট্র। ভারত এই রাষ্ট্রগুলোকে সমর্থন করে। কোন বৃহৎশক্তি চীনের সাথে বিরোধে না জড়ালেও ভারতের সমর্থনে ভিয়েতনাম কিছুটা বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ভিয়েতনাম চীনের যেকোনো আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য ভারতের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সামরিক চুক্তি করে, অর্থনৈতিক চুক্তির পাশাপাশি ভারত ভিয়েতনামকে বেশ কিছু অত্যাধুনিক ব্রামোস ক্রুজ মিশাইল ক্ষেপণাস্ত্র দেয়, যা চীনের যেকোনো হামলা প্রতিরোধে সক্ষম। ভিয়েতনাম ভারতের এসব শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র তার দ্বীপগুলোতে গোপনে মোতায়েন করেছে, যা চীন ভালভাবে গ্রহণ করেনি।
এখন আবার তিব্বতে সামরিক প্রস্তুতি বাড়াতে শুরু করেছে চীন। লাদাখ ও অরুণাচলে ভারতের অতিমাত্রায় সমরাস্ত্র ও সেনা মোতায়েন করার পর তিব্বতের দাওচেং ইয়াদিং বিমানবন্দরে দেখা গেছে চীনের জে-২০ স্টেল্থ ফাইটারকে। এই বিমানের বৈশিষ্ট্য হলো বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে রাডারকে ফাঁকি দিয়ে গোপনে প্রতিপক্ষের এলাকায় আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে তার।
অপরদিকে বহু দিন শান্ত থাকার পর আবারও উত্তাপ ছড়িয়েছে কাশ্মীর উপত্যকায়। জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বুরহান ওয়ানি ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতিবাদে উত্তাল কাশ্মীর। জবাবে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। চোখ হারিয়েছেন অন্তত শতাধিক কাশ্মীরি। টানা বিক্ষোভে জেরবার কাশ্মীরের উরিতে ১৮ই সেপ্টেম্বর সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। আর এর পরপরই আরো একবার মুখোমুখি চিরবৈরী দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের দাবি পাকিস্তান থেকে জঙ্গিরা কাশ্মীরে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। যুদ্ধ নিয়ে এখন পর্যন্ত চলছে টান টান উত্তেজনা, রাষ্ট্রনায়করা একে অপরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী বার্তা উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। গবেষকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এতে অন্তত ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা।
আমি বিশ্বের সবগুলো বিবদমান যুদ্ধমুখী দেশের পরিস্থিতি এই প্রবন্ধে আনতে পারলাম না, যেগুলো প্রধান আলোচ্য সেগুলোই বললাম। আমাদের দেশের পরিস্থিতিও সকলের জানা। আইএস বিরোধী যুদ্ধ সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তাতে যোগও দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ঢেউ গোনা যায় কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ এমন একটি বন্যার মত তার কোনো তীর থাকে না, তা সবাইকেই প্লাবিত করে। এতে কোনো না কোনো পক্ষে অংশগ্রহণ না করে কোনো উপায় থাকে না। তাছাড়া বর্তমানের বিশ্ব একশ বছর আগের বিশ্বের মতো নয়। প্রতিটি দেশ কোনো না কোনো পরাশক্তির সঙ্গে নানাপ্রকার নিরাপত্তা চুক্তি, অস্ত্রচুক্তি ইত্যাদিতে আবদ্ধ। তাই যুদ্ধ শুরু হলে সেই সব চুক্তির কারণে সবাইকেই তাতে জড়িয়ে পড়তে হবে, না জড়ালে চুক্তিভঙ্গের দরুন আক্রান্ত হতে হবে। আমেরিকা চীনের মধ্যে যুদ্ধ হলে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হবে এটা ইতোমধ্যেই সেই যুদ্ধের প্রকাশিত মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং আমরা ক্রিকেট নিয়ে, ঈদ নিয়ে, পূজা নিয়ে, আশুরা নিয়ে যতই ব্যস্ত হয়ে থাকি, জঙ্গিবাদীরা ও সাম্রাজ্যবাদীরা এদেশকে যুদ্ধক্ষেত্র বানাতে বদ্ধপরিকর এ কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। বড় ভয়াবহ সেই পরিস্থিতি যা আমাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে কিন্তু আমরা নির্বিকার। আমাদের সামনে এখনও জাতিকে রক্ষা করার উপায় আছে। সেটা হচ্ছে আমরা ষোল কোটি মানুষ যদি কোনোভাবে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। যে কোনো দেশের জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাদের মধ্যে জাতীয় ও ধর্মীয় চেতনা প্রবল হয় তাহলে কেউ সেই জাতিকে সহজে পরাভূত করতে পারে না। আমাদের আছে ধর্মবিশ্বাস, আমাদের আছে দেশপ্রেম, আছে একাত্তরে জাতীয় ঐক্য গঠন করে যুদ্ধজয়ের ইতিহাস। এখন প্রয়োজন কেবল ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না বললেই নয়। পারমাণবিক শক্তি অর্জনের দম্ভে মদমত্ত হয়ে পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিশ্বময় যেভাবে রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম নামক জনগোষ্ঠীকে তারা নারকীয় অবস্থায় নিক্ষেপ করেছে তাতে করে রসুলাল্লাহর দাজ্জাল সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। হতে পারে ইউরোপের মধ্যযুগে জন্ম নেওয়া স্রষ্টাহীন দর্শন যা এই আত্মাহীন, বস্তুবাদী সভ্যতার জন্ম দিয়েছে, যার ক্ষমতালিপ্সু, আধিপত্যবাদ গোটা মানবজাতিকে ধ্বংসের দুয়ারে নিয়ে গেছে, সেটাই রসুলাল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণীর রূপক একচক্ষুবিশিষ্ট দানব দাজ্জাল কিনা যথেষ্ট ভাববার বিষয়। লেখক: সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *