ঢাকা বিভাগ
নগরকান্দায় ১০ টাকা কেজির চালের ডিলারশিপে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
হারুন-অর-রশীদ,ফরিদপুর প্রতিনিধি
সরকার ঘোষিত ১০ টাকা কেজি দরে হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণে ফরিদপুরের নগরকান্দায় নানা অনিয়ম ও বরাদ্দের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে রঞ্জিত কুমার মন্ডল নামে এক ডিলারদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রঞ্জিত মন্ডল একটি সরকারি কলেজের প্রফেসর ও আওয়ামীলীগ নেতা। এছাড়া, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে তালিকাভুক্ত করেছে অনেক সচ্চলসহ মৃত্যু ব্যাক্তি ও প্রবাসে থাকাদের নাম । এছাড়াও হতদরিদ্রদের ২ টন চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন একাধিক ব্যাক্তি । অন্যদিকে, একটি সরকারি কলেজের প্রফেসর থাকা সত্ত্বেও তিনি কিভাবে ১০ টাকা কেজি চালের ডিলারশিপ পান এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে ?
সরেজমিনে গিয়ে ও কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, উপজেলার মানিকদি গ্রামের তাহের মোল্লার ছেলে আলেফ মোল্লা তিন বছর আগে মারা যান । কিন্তু তার নামেও কার্ড হয়েছে । যার কার্ড নং ১১৩৩ । এই ব্যাক্তির নামে দুই টার্ম চাল উত্তোলনও কাগজপত্রে দেখা যায় । কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আলেফ মোল্লার পরিবারের কেউ চাল উত্তোলন করেননি ।
এদিকে, একই গ্রামের হাচোন মোল্লা মারা গেছেন ৫ বছর আগে । তবে তাঁর নামেও কার্ড হয়েছে । যার কার্ড নং ১১৩৬ এবং কার্ডে তাঁর মেয়ে লাইলি বেগমের ছবি দেখানো হয়েছে । লাইলির অভিযোগ, তারা কোনো চাল উত্তোলন করেননি ।
এরকম বিভিন্ন বিভাগে অভিযোগ রয়েছে প্রায় ৫০ জনের । তবে, স্থানীয়দের প্রশ্ন এ চাল গেল কোথায় ?
দক্ষিণ বিলনালিয়া গ্রামের হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা শেখ বাবু আক্ষেপ করে বলেন, “আমার কার্ড হয়েছে জেনে রঞ্জিতের মন্ডলের কাছে গিয়ে বলি বাবু আমিতো হত দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আমার
কার্ড কই, আমি কি কার্ড পাবোনা ? ডিলার রঞ্জিত দাম্ভিকতার সাথে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা-চুক্তিযোদ্ধা বুঝিনা কার্ড নেই দিবো কোথা থেকে,যান ?”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন রঞ্জিতের ডিলারশিপ বাতিল করে কিছুদিন আগে নতুন ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেন রাফেজা আলমগীরকে । আর রাফেজা হতদরিদ্রদের চাল দিতে গেলেই এসব অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে । রাফেজা অভিযোগ করেন, রঞ্জিত মন্ডল আমার ২০০ কার্ড এখনও বুঝিয়ে দেয়নি । এজন্য আমি দুইশত হতদরিদ্রদের মাঝে এখনও চাল দিতে পারিনি । এই হতদরিদ্ররা প্রতিদিন আমার বাড়িতে আসে । কিন্তু কার্ড না পেলে তাদের কিভাবে চাল দিবো বলেন ?
বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত রঞ্জিত কুমার মন্ডলের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল-ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি ।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাজাহারুল ইসলাম বলেন, কালোবাজারে চাল বিক্রি বা কোনো অনিয়মের বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন- প্রকল্পটা পূর্বের চেয়ারম্যানদের আমলে এসেছে। তাই ওই সময়ের চেয়ারম্যানদের তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এজন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, উক্ত ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।