ঢাকা বিভাগ
যৌতুকের নির্মম নির্যাতনে দু-চোঁখ হাঁরাতে বসেছে গৃহবধূ আম্বিয়া
যৌতুকের কারণে নির্মম নির্যাতনে দু-চোঁখ হাঁরাতে বসেছে মাগুরার আড়পাড়া উপজেলার দিঘী গ্রামের অসহায় গৃহবধূ আম্বিয়া (২৫) । দু-চোঁখ হাঁরাতে বসা এই গৃহবধূ ফরিদপুর জহরুল হক চক্ষু হাপাতালে ছাঁনি অপারেশন করতে আসলে সাংবাদিকদের সাথে তাঁর কথা হয় । আর তখনি-ই এই নির্মম নির্যাতনে ইতিহাস বেড়িয়ে আসে ।
আম্বিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দিঘী গ্রামের কায়েম বিশ্বাসের ছেলে জামাল বিশ্বাসের সঙ্গে ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আম্বিয়ার (২০)। তিনি (আম্বিয়া) একই জেলার পার্শ্ববর্তী শালিকা থানার দেওয়াডাঙ্গা গ্রামের ধলা মোল্লার মেয়ে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে জামাতাকে নগদ টাকা,স্বর্ণালংকারসহ প্রায় এক লাখ টাকা দেন ফাহমিদার বাবা। কিন্তু যৌতুক লোভী জামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই বিদেশে যাওয়ার কথা বলে আবারও বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের ২ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয় তাঁকে। আর এজন্য তাঁর ওপর কারণে-অকারণে চালানো হয় শারীরিক-অত্যাচার নির্যাতন। কিন্তু তাদের শত অত্যাচার নির্যাতন চোঁখ বুজে সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এতে গৃহবধূর বাবা তাঁর আদরের মেয়ের সুখের কথা ভেবে ঋণ গ্রহণ করে জামাতার হাতে নগদে ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন।
আম্বিয়া জানান, কিন্তু এতেও যৌতুকলোভী জামালের মন ভরে না। সে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের বাকি টাকার জন্য আবারও অমানুসিক নির্যাতন করতে থাকে গৃহবধূ আম্বিয়ার ওপর। কিন্তু বাবার আর্থিক অনটনের কারণে তা আনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন আম্বিয়া। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী জামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলে গৃহবধূ আম্বিয়াকে বেদম মারপিট করে। এর এক পর্যায়ে তাঁকে জোরপূর্বক স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে অনেকটাই নিরূপায় হয়ে গৃহবধূ তাঁর বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন।
পরবর্তীতে যৌতুকলোভী জামাল আর তাঁর স্ত্রী’র কোন খোঁজ-খবর নেয়নি। এরপর স্থানীয়ভাবে একাধিকবার দেন-দরবার করেও আর আপোষ-মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে গৃহবধূ আম্বিয়াকে শশুর বাড়ির লোকজন বুঝিয়ে তাদের বাড়িতে নেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও সবাই মিলে ওই গৃহবধূর ওপর চড়াও হন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাকে টাকা আনার কথা বলে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারতে থাকেন।এতে তার দু-চোঁেখ ছাঁনি পড়ে অন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে ।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) ফরিদপুর শহরের জাহরুল হক চক্ষু হাসপাতলে চোখের ছাঁনি অপারেশন করতে আসা আম্বিয়ার সাথে কথা হয় স্ংাবাদিকদের। তিনি তখন বলেন, ‘ওরা যে এতো বর্বর পাষাণ – তা বুঝেনি আগে। ওরা সবাই মিলে আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার না করলে আমাকে মেরেই ফেলতো । মানুষ কি এতো নিষ্ঠুর, নির্দয় হতে পারে ? আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ অত্যাচার-নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকে চোঁখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
আম্বিয়ার ভাই ইব্রাহিম মোল্লা জানান, বোনের সুখের জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু অর্থলোভী বোন জামাই জামাল ও তার পরিবার আবারও যৌতুকের জন্য আমার বোনের উপর নির্যাতন শুরু করে। যৌতুকের জন্য মানুষ হয়ে মানুষ এ রকম নির্মম নির্যাতন করতে পারে ? ভাই আমার বোনের দু-চোঁখই আজ হাঁরিয়ে গেল !
আর এ ঘটনায় মামলা না করার জন্য জামাল বিভিন্নধরনের হুঁমকি-ধমকি দিচ্ছে বলেও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগে করেন ইব্রাহিম।
জাহরুল হক চক্ষু হাসপাতলে চোখের ছাঁনি অপারেশনের ডাক্তার রাহাত আনোয়ার চৌধুরী জানান, গৃহবধুটির যে বয়স তাতে সাধারণত চোঁখে ছাঁনি পড়েনা । তাই আপাতত মনে হচ্ছে আঘাত জনিত কারণে এ ছাঁনি পড়তে পারে । অন্যদিকে গৃহবধুটির চোঁখের অবস্থাও ততোটা ভালো মনে হচ্ছেনা ।
এ বিষয়টি নিয়ে গৃহবধূ আম্বিয়ার স্বামী জামাল বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
শালিখা থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সাংবাদিকদের বলেন, এব্যাপারে আমরা আপাতত কোনো অভিযোগ পাইনি । লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।