Connect with us

ফিচার

পানি শূন্য তিস্তা নদী

Published

on


চির চেনা তিস্তা নদীর অতীতের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে এ প্রকল্পের আওতায় জমি কমানোর পর অর্ধেক জমিতেও সেচ দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে সেচ প্রকল্পের কৃষক বোরো আবাদ বাদ দিয়ে পাট ও ভুট্টা চাষে বাধ্য হচ্ছেন। সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারাজের উজানে ও ভাটিতে ধু ধু বালুচর। সরু নালার আকার ধারণ করেছে তিস্তার প্রমত্ত স্রোতধারা।

এদিকে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড আসন্ন বোরো মৌসুমে মাত্র আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকা ঘুরে কৃষক ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি প্রতিদিন কমছে। ফলে নদীর উজান ও ভাটি এলাকায় বালুচর পড়েছে। সরু নালার আকার ধারণ করেছে তিস্তার স্রোতধারা। এক সপ্তাহ আগে ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেক। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে ১২শ’ কিউসেকে। তাও প্রতিদিন পানি প্রবাহ কমছেই। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নদীর উজানের প্রবাহ ঐতিহাসিক গড় প্রবাহের (১৯৭৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত) তুলনায় গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

সূত্র মতে, ২০০১ হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময় এই সেচের পানি পেতো নীলফামারী, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দর পর্যন্ত।

কিন্তু ২০১১ সালের পর হতে শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি প্রবাহ এতটাই নেমে আসে যে, সে সময় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।

কৃষকেরা জানান, সেচ প্রকল্পের চেয়ে ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি খরচ করে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে কেউ কেউ বোরো চাষ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। যাঁদের নলকূপের সাহায্যে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাঁদের বোরো খেত নষ্ট হয়ে পরিণত হচ্ছে পতিত জমিতে।

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে সে দেশের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কারণেই বর্ষা শেষ হতে না হতে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা মরা খালে পরিণত হয়। ফলে পরিবর্তীত হয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ১২৫ কিলোমিটার তিস্তা পাড়ের জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ আজ মৃত প্রায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার এক লাখ ১১ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের জুনে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ১৯৭৯ সালে এবং ক্যানেল সিস্টেমের নির্মাণকাজ ১৯৮৪-৮৫ সালে শুরু হয়। কিন্তু শুরুর দিকে ৭৯ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়া গেলেও পানির অভাবে প্রতি বছর সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে থাকে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান বলেন, উজান থেকে তিস্তার পানি আসা কমে যাওয়ায় বোড মিটিং এ চলতি বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিডিপত্র/আমিরুল

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *