জাতীয়
ফেলানী হত্যার ৬ বছরেও মেলেনি ন্যায় বিচার
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাটাতারের বেড়ায় নির্মমভাবে খুন হয় কিশোরী ফেলানী। ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ কাটা তারেই ঝুলে থাকে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা। ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশের ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এক পর্যায়ে বিজিবির দাবীর মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ’র বিশেষ আদালতের সোনারী ছাউনীতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। ঐ বছর ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় ঐ আদালত।
আবারো সমালোচনার ঝড় উঠলে পরবর্তীতে বিজিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে রায় পুর্নবিবেচনার জন্য ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে বিএসএফ’র বিশেষ আদালত। আবারও অমিয় ঘোষকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে পুর্বের রায় বহাল রাখে বিএসএফ’র আধিকারী সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেল।
ফেলানীর পিতা নুরুল ইসলাম জানান, বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে কন্যা হত্যার ন্যায় বিচার না পেয়ে ২০১৫ সালের ৪ আগষ্ট ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম’র(মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ) সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রিট করেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রিটটি গ্রহণ করে শুনানীর জন্য সম্মত হয়। ফলে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার এখন সর্বোচ্চ আদালতের ওপর। তিনি বলেন, আমি এখনও আশাবাদি ভারতের উচ্চ আদালতে আমার কন্যা হত্যার ন্যায় বিচার পাবো।
সন্তানের নির্মম এ হত্যার কথা মনে হলে এখনও ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা জাহানারা বেগম। সংসারের নানা দুঃখ কষ্টের মাঝেও দাবী করেন অভিযুক্ত অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তি। তিনি দাবী করেন তার বুকের ধন ফেলানীকে যেভাবে পাখীর মত গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ, তেমনি তার সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত করেন ভারতের উচ্চ আদালত। যেন অভিযুক্তের মায়েরও একই কষ্ট অনুভব হয়। সীমান্তরক্ষী সকল সদস্যদের মায়েরা যেন এই শাস্তির কথা ভেবে তাদের সন্তানদের এই শিক্ষাই দেন, বিনা অপরাধে কোন মায়ের কোল যেন খালি করা না হয়।
ফেলানীর নির্মম হত্যাকান্ডের কথা এখনও ভুলতে পারেননি তার স্বজনসহ এলাকাবাসী। সীমান্ত এলাকায় বাস করা এ মানুষগুলো সব সময় আতংকে দিন কাটান। তাদের দাবী এ হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচারসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধের।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রিটটি গ্রহণ করায় এবার ন্যায় বিচারের আশা করছেন তিনি। ইতিপুর্বে বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে দু’দুবার অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু ঐ আদালতের বিচারক, বিচারপ্রার্থী, আসামী এবং বিচারকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই বিএসএফ’র সদস্য। ফলে সেখানে ন্যায় বিচার প্রাপ্তি দুরহ ছিল। মামলাটি ভিন্ন রাষ্ট্রের হওয়ায় এ মামলার আপিলের সুযোগ আমাদের নেই। আপিল করতে হলে বিএসএফকেই করতে হবে। তারা মামলাটির ন্যায় বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতের দারস্থ না হওয়ায় ফেলানীর বাবা ও ভারতের একটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আমরা আশা করি ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। এ মামলায় ভারতের উচ্চ আদালতে ইতিবাচক রায় হলে সীমান্তে আইন বহির্ভুত হত্যাকান্ড বন্ধ হবে এমনটাই আশা বাংলাদেশের মানুষের।